শিয়া ইসলাম: পরিচিতি, সুন্নিদের সাথে পার্থক্য, বিশ্বব্যাপী বন্টন এবং মুসলিম পরিচয় বিতর্ক

১. ভূমিকা

১.১. ইসলামের দুটি প্রধান শাখা হিসেবে শিয়া ও সুন্নিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

শিয়া ইসলাম: পরিচিতি, সুন্নিদের সাথে পার্থক্য, বিশ্বব্যাপী বন্টন এবং মুসলিম পরিচয় বিতর্ক


ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা হলো শিয়া ইসলাম (আরবি: شيعة‎, প্রতিবর্ণীকৃত: Shīʿah‎), যা সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ১০-১৫% কর্তৃক অনুসৃত হয় 1। এই সম্প্রদায়ের অনুসারীদের শিইতি বা শিয়া বলা হয় 3। এর বিপরীতে, সুন্নি মুসলমানরা ইসলামের বৃহত্তম শাখা এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৮৫-৯০% গঠন করে 2। "শিয়া" শব্দটি আরবি "শিয়াতু আলি" (شيعة علي) এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার আক্ষরিক অর্থ "আলি অনুগামীরা" বা "আলির দল" 3। এই নামকরণ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রাঃ)-এর প্রতি তাদের গভীর আনুগত্য এবং সমর্থনকে ঐতিহাসিকভাবে নির্দেশ করে 6

১.২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং বিভাজনের মূল কারণের একটি সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ

শিয়া-সুন্নি বিভাজনের মূল কারণ নিহিত রয়েছে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর সঠিক উত্তরাধিকারী কে হবেন, এই মৌলিক প্রশ্নে 2। শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) গাদির খুমের ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা ইমাম আলী (আঃ)-কে তাঁর পরবর্তী নেতা হিসেবে মনোনীত করে গিয়েছিলেন 2। অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন সঠিক উত্তরাধিকারী, যাকে মুসলিম উম্মাহর দ্বারা নির্বাচিত প্রথম খলিফা হিসেবে গণ্য করা হয় 7

এই বিভাজন প্রাথমিকভাবে একটি রাজনৈতিক বিরোধ হিসেবে শুরু হলেও, সময়ের সাথে সাথে এটি গভীর ধর্মতাত্ত্বিক ও আইনগত মতপার্থক্যে রূপান্তরিত হয়েছে 7। এই ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে, যখন একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ একটি সম্প্রদায়ের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই মতাদর্শকে বৈধতা দিতে এবং এর অনুসারীদের মধ্যে সংহতি বজায় রাখতে ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও বিশ্বাসকে এর সাথে সংযুক্ত করা হয়। আলীর উত্তরাধিকারের দাবি কেবল রাজনৈতিক ছিল না, বরং শিয়ারা বিশ্বাস করে যে এটি ঐশ্বরিক নির্দেশ ছিল 2। এই ঐশ্বরিক বৈধতার দাবিই রাজনৈতিক বিভাজনকে ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তির উপর স্থাপন করে, যার ফলে ইমামত, ইমামদের নিষ্পাপত্ব, এবং আহলে বাইতের বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কিত বিশ্বাসগুলো বিকশিত হয়। এই প্রক্রিয়াটি কেবল ঐতিহাসিক বিভাজনকে স্থায়ী করেনি, বরং এটি শিয়া ও সুন্নিদের ধর্মীয় অনুশীলন, আইনশাস্ত্র এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিকে মৌলিকভাবে ভিন্ন পথে চালিত করেছে, যা আজও তাদের সম্পর্কের জটিলতাকে প্রভাবিত করে। এটি বর্তমান শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের জটিলতা বোঝার জন্য অপরিহার্য, যেখানে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিরোধগুলো আজও ধর্মীয় মতপার্থক্যের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং প্রায়শই ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের জন্ম দেয় 11

১.৩. প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু

এই প্রতিবেদনটি শিয়া ইসলাম, সুন্নিদের সাথে এর প্রধান পার্থক্য, শিয়াদের বিশ্বব্যাপী ভৌগোলিক বন্টন এবং তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রচলিত বিতর্কগুলোকে নিরপেক্ষ ও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করবে। এর লক্ষ্য হলো পাঠককে একটি সুসংহত এবং ভারসাম্যপূর্ণ ধারণা প্রদান করা।

২. শিয়া কারা?

২.১. শিয়া শব্দের উৎপত্তি ও অর্থ ("শিয়াতু আলি")

"শিয়া" শব্দটি আরবি "শিয়াতু আলি" (شيعة علي) এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার আক্ষরিক অর্থ "আলি অনুগামীরা" বা "আলির দল" 3। এই নামকরণ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (রাঃ)-এর প্রতি তাদের গভীর আনুগত্য এবং তাঁকে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রকৃত আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে মেনে চলার বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত 6। ঐতিহাসিকভাবে, শিয়া মতবাদ একটি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে শুরু হলেও, আববাসী যুগে এর স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয় এবং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মমতে রূপ নেয় 1

২.২. শিয়া ইসলামের মূল বিশ্বাস: আহলে বাইত ও ইমামতের ধারণা

শিয়ারা নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর শিক্ষা এবং তাঁর পরিবার (যাদের আহলে বাইত বলা হয়) বা বংশধরদের (শিয়া ইমামগণ) ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলে 1। আহলে বাইতকে তারা ইসলামের পবিত্রতম স্থান কাবার অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণকারী একমাত্র ব্যক্তি হযরত আলী (রাঃ)-এর মাধ্যমে নবী (সঃ)-এর একমাত্র ন্যায্য স্থলাভিষিক্ত এবং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করে 1। শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো, হযরত আলী (রাঃ) এবং ফাতিমা (রাঃ)-এর বংশের মাধ্যমেই নবী পরিবারের লোকেরাই ইমামত বা নেতৃত্বের প্রধান দাবীদার 3। তারা বিশ্বাস করে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের মনোনীত নেতা হিসেবে ইমামরা মুসলমানদের জন্য পথপ্রদর্শক 12

শিয়ারা, বিশেষ করে ইসনা আশারিয়া শাখা, ১২ জন ইমামে বিশ্বাস করে, যাদেরকে তারা আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত, নিষ্পাপ (মাসুম) এবং মহামানব মনে করে 8। তাদের বিশ্বাস, এই ইমামরা কখনও ভুল করেন না এবং বিষ পান করা যেমন একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে অসম্ভব, তেমনি তাদের পক্ষে পাপ বা ভুল করাও অসম্ভব 12। এই ১২ জন ইমামের মধ্যে সর্বশেষ ইমাম হলেন ইমাম মাহদী (আঃ), যিনি বর্তমানে অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছেন এবং তার আগমনের পর মূল কুরআন তেলাওয়াত করা হবে বলে কিছু শিয়া বিশ্বাস করে 12

শিয়াদের মূল পরিচয় "আলির অনুগামীরা" 3। এই অনুসরণ কেবল রাজনৈতিক সমর্থন ছিল না, বরং আলীকে ঐশ্বরিকভাবে মনোনীত নেতা (ইমাম) হিসেবে দেখার বিশ্বাস 3। এই ইমামত ধারণাটি শিয়া ধর্মতত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু 8। ইমামদের নিষ্পাপত্ব 12 এবং তাদের ঐশ্বরিক জ্ঞান ও কর্তৃত্বের বিশ্বাস 8 শিয়াদের ধর্মীয় কাঠামোকে সুন্নিদের থেকে মৌলিকভাবে আলাদা করে। এই বিশ্বাস রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিয়া রাষ্ট্রগুলোর (যেমন ইরান) আইন ও শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে 1। সফবীয় রাজবংশের অধীনে ইরানের প্রাক্তন সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে শিয়া ইসলামে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের প্রক্রিয়াটি 1 এই ধর্মতাত্ত্বিক ধারণার রাজনৈতিক প্রয়োগের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ইমামতের ধারণা কেবল ধর্মীয় নেতৃত্বকে সংজ্ঞায়িত করে না, বরং এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, আইন প্রণয়ন এবং সামাজিক কাঠামোরও ভিত্তি তৈরি করে, যা সুন্নিদের "খিলাফত" ধারণার সাথে একটি মৌলিক পার্থক্য তৈরি করে। এই মৌলিক ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্যই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহাসিক সংঘাতের 11 অন্যতম মূল কারণ এবং বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এর প্রভাব বিদ্যমান।

২.৩. শিয়াদের প্রধান উপশাখা: ইসনা আশারিয়া (দ্বাদশী), ইসমাইলি এবং জায়েদি

শিয়া ইসলামে তিনটি প্রধান উপ-সম্প্রদায় রয়েছে: ইসনা আশারিয়া (দ্বাদশী), ইসমাইলি এবং জায়েদি 17

      ইসনা আশারিয়া: এটি শিয়াদের বৃহত্তম উপ-সম্প্রদায়, যারা ১২ জন ইমামের শিক্ষায় বিশ্বাস করে এবং শিয়াদের মধ্যে প্রায় ৮৫% এই শাখার অন্তর্ভুক্ত 17। তারা জাফরী মাজহাব নামক আইনি কাঠামো মেনে চলে, যা শিয়া ইসলামের ষষ্ঠ ইমাম জাফর আস-সাদিকের নামে নামকরণ করা হয়েছে 17

      ইসমাইলি: এই শাখাটি ইসমাইল ইবনে জাফরের অনুসারী এবং নিজারি ইসমাইলি, মুসতারি ইসমাইলি, দাউদি বোহরা, তৈয়বি ইসমাইলি ইত্যাদি উপশাখায় বিভক্ত 17

      জায়েদি: জায়েদ ইবনে আলীর অনুসারী এই উপ-সম্প্রদায়টি বর্তমানে মূলত ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে 17। যদিও তারা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত, বর্তমান সময়ে তারা সুন্নি ইসলামের দিকে বেশি ঝুঁকছে 17

৩. সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে মূল পার্থক্য

সুন্নি ও শিয়া মুসলিমদের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও, তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান, যা মূলত নেতৃত্ব, ধর্মীয় আইন, ধর্মতত্ত্ব এবং ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

 

৩.১. নেতৃত্ব ও খিলাফতের প্রশ্ন

 

ইসলামে এই দুটি প্রধান শাখার উদ্ভব মূলত নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব বা খিলাফত সংক্রান্ত বিরোধ থেকে 2

      শিয়া দৃষ্টিকোণ: শিয়ারা বিশ্বাস করেন যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা ইমাম আলী (আঃ) এবং তাঁর বংশধররা 2। তাদের মতে, নবী (সাঃ) গাদির খুমের দিনে আলী (আঃ)-কে তাঁর পরবর্তী নেতা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, যা ঐশ্বরিক নির্দেশনার ভিত্তিতে নির্ধারিত 8

      সুন্নি দৃষ্টিকোণ: সুন্নিরা বিশ্বাস করেন যে খলিফারা মুসলিম উম্মাহর দ্বারা নির্বাচিত হন এবং তারা ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা 8। তারা হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে প্রথম খলিফা হিসেবে মেনে নেন, যাকে সাহাবীরা নির্বাচন করেছিলেন 7

৩.২. ধর্মীয় আইন ও আচার-অনুষ্ঠান (ফিকহ)

      নামাজ: উভয় সম্প্রদায়ই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে এবং ফরয রাকাআতের সংখ্যায় মিল রয়েছে (১৭ রাকাআত) 20। তবে, নামাজ পড়ার পদ্ধতিতে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। সুন্নিরা নামাজ পড়ার সময় সাধারণত তাদের বাহু ভাঁজ করে (হাত বাঁধে), যখন শিয়ারা হাত ছেড়ে নামাজ পড়ে (মালিকি মাজহাবের অনুসারীদের সাথে এই ক্ষেত্রে মিল রয়েছে) 7। সিজদার ক্ষেত্রে, শিয়ারা সাধারণত কারবালার মাটিতে তৈরি বস্তু বা অন্য কোনো পবিত্র মাটির উপর কপাল রেখে সিজদা করে, যেখানে সুন্নিরা সরাসরি মাটিতে বা জায়নামজে সিজদা করে 7। শিয়াদের ফিকহ অনুযায়ী, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে তিনবারে আদায় করা জায়েজ (ফজর, এরপর যোহর+আসর, এরপর মাগরিব+এশা), যা সুন্নি মতে কেবল জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত 15। ওজুর ক্ষেত্রে, শিয়ারা কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত (উপর থেকে নিচের দিকে) ধৌত করে, যা তারা আহলে বাইতের ইমামদের থেকে প্রাপ্ত পদ্ধতি হিসেবে দাবি করে 20

      হজ: হজ ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ এবং উভয় সম্প্রদায়ই এর মূল আচার-অনুষ্ঠানগুলো পালন করে 20। তবে, কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিয়া তীর্থযাত্রীরা ইহরাম পরার সময় ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের শোকের প্রতীক হিসেবে অনেক সময় গাঢ় রঙের পোশাক বেছে নেয় 23। তাওয়াফের সময় শিয়ারা বিশেষ দোয়া পাঠ করে এবং হজের পর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের কবর জিয়ারত করতে পারে, যা সুন্নিদের অনুশীলনে ভিন্ন হতে পারে 23। জামারাত-এ শয়তানকে পাথর মারার ক্ষেত্রেও কিছু পদ্ধতিগত বা উদ্দেশ্যগত পার্থক্য থাকতে পারে, যেখানে শিয়ারা তাদের প্রার্থনায় ঐশ্বরিক নির্দেশনা ও আধ্যাত্মিক শক্তির উপর বেশি জোর দেয় 23

      মুত'আ বিবাহ (সাময়িক বিবাহ): মুত'আ বিবাহ শিয়া ইসলামে বৈধ এবং এটি একটি নির্দিষ্ট সময় ও মোহরের বিনিময়ে সংঘটিত হয় 25। শিয়া ফিকহ অনুযায়ী, মুত'আ বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের সংখ্যা সীমিত নয়, এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যয়ভার বহন, বাসস্থানের ব্যবস্থা বা উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো স্থায়ী বিবাহের মতো আবশ্যক নয় 15। সুন্নি মুসলমানরা মুত'আ বিবাহকে নিষিদ্ধ (হারাম) মনে করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এটি পরে নিষিদ্ধ করেছিলেন 15

যদিও শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে মৌলিক বিশ্বাসে মিল রয়েছে 2, ফিকহ বা ধর্মীয় আইনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বেশ কিছু পদ্ধতিগত পার্থক্য দেখা যায় 7। নামাজের পদ্ধতি (যেমন হাত বাঁধা বা না বাঁধা, সিজদার স্থান, ওয়াক্তের সমন্বয়), ওজুর নিয়ম, এবং হজের কিছু আচার-অনুষ্ঠানে এই পার্থক্যগুলো স্পষ্ট। মুত'আ বিবাহের বৈধতা একটি উল্লেখযোগ্য ফিকহী পার্থক্য যা সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে ভিন্নতা আনে 15। এই ফিকহী পার্থক্যগুলো কেবল ধর্মীয় কিতাবের বিষয় নয়, বরং মুসলিমদের দৈনন্দিন ইবাদত ও জীবনযাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এই দৈনন্দিন অনুশীলনের ভিন্নতা সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা এমনকি সংঘাতেরও কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন এক পক্ষ অন্য পক্ষের ফিকহী অনুশীলনকে "ভ্রান্ত" বা "বিদআত" মনে করে। এই পরিস্থিতি মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য এবং একই সাথে বিভেদের উৎস উভয়কেই তুলে ধরে।

৩.৩. ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্য

      শাহাদা (কালিমা) ও আযানে অতিরিক্ত বাক্য: ইসলামের শাহাদা বা বিশ্বাসের ঘোষণার শিয়া সংস্করণ সুন্নি সংস্করণ থেকে কিছুটা ভিন্ন। সুন্নি শাহাদাতে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ হলেন আল্লাহর রাসূল) বলা হয়। শিয়ারা এর সঙ্গে একটি অতিরিক্ত বাক্য "আলীউন ওয়ালীউল্লাহ" (আলী হলেন আল্লাহর ওয়ালি) সংযোজন করে, যা আলীর অবিভাবকত্বের উপর শিয়াদের গুরুত্বারোপকে বহন করে 5। আযানেও শিয়ারা "আলীউন ওয়ালীউল্লাহ" এবং "হাইয়া আলা খায়রিল আমাল" (ভাল কাজে উদ্যোগী হও) বাক্যগুলো যুক্ত করে 5

      ইমামতের ধারণা: শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমামরা আল্লাহ কর্তৃক নিযুক্ত, নিষ্পাপ এবং মহামানব 8। তারা কেবল আলীর বংশধরদের মধ্যে থেকে হন এবং তাদের নির্দেশনাই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত 8। কিছু শিয়া বিশ্বাস অনুযায়ী, কিয়ামতের দিন হিসাব আল্লাহ তায়ালার নিকট নয় বরং তাদের ইমামদের নিকট দিতে হবে, যা সুন্নিদের কাছে একটি বিতর্কিত বিশ্বাস 29। ইমামী শিয়াদের একটি উপদল বিশ্বাস করে যে, ইমামরা সমগ্র সৃষ্টি বা মাখলুক, এমনকি এক একটি অনু-পরমানুও নিয়ন্ত্রণ করেন (আল-বিলায়াহ আত-তাকবীনিয়াহ), যা সুন্নিদের মতে আল্লাহর রুবুবিয়াহ-এর (তাওহীদ আর রুবুবিয়াহ) পরিপন্থী এবং শিরক 14

      তাকিয়া (বিশ্বাস গোপন রাখার নীতি): তাকিয়া (আরবি: تقیة) হলো নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশীলন গোপন রাখা বা ভান ধরা, বিশেষত যখন জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে 29। শিয়া ধর্মগুরুরা তাকিয়াকে "ধর্মের নয় দশমাংশ" বলে মনে করেন এবং এটি বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেওয়া ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যা বলা, প্রতারণা বা প্রবঞ্চনার একটি বৈধ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে 15। তাকিয়া শিয়াদের জন্য আত্মরক্ষা ও সুরক্ষার একটি পদ্ধতি হিসেবে বিকশিত হয়েছে, বিশেষ করে যখন তারা সংখ্যালঘু হিসেবে সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে নিপীড়নের শিকার হয় 31। সুন্নি পণ্ডিতরা তাকিয়াকে অমুসলিমদের সাথে বা জোরপূর্বক পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ রাখলেও, শিয়া আইনবিদরা মুসলিমদের সাথে এবং প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে এর অনুমতি দেন, যা বিতর্কের জন্ম দেয় 31। তাকিয়া শিয়া ধর্মতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ 15। এটি মূলত নিপীড়নের সময় বিশ্বাস গোপন রাখার একটি কৌশল হিসেবে শুরু হয়েছিল 31। শিয়া ধর্মগুরুরা তাকিয়াকে "ধর্মের নয় দশমাংশ" বলে মনে করেন 28। তবে, কিছু সুন্নি সূত্র এটিকে "ধোঁকাবাজি" বা "মুনাফেকী" হিসেবে দেখে এবং এটিকে "ইসলামী আক্বিদার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক" বলে মনে করে 15। এই বিতর্কটি তাকিয়ার ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর নির্ভর করে। যদি এটি কেবল জীবন রক্ষার জন্য হয়, তবে সুন্নি পণ্ডিতরাও এর কিছু ক্ষেত্রে বৈধতা দেন 31। কিন্তু যদি এটি "বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেয়া ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যা বলা" হিসেবে বিবেচিত হয় 28, তবে এটি নৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে। এটি শিয়াদের বিরুদ্ধে "ভ্রান্ত আক্বিদা" ছড়ানোর অভিযোগের 29 একটি প্রধান কারণ এবং আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কে অবিশ্বাস বাড়ায়।

৩.৪. কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি

      কুরআনের বিশুদ্ধতা: এটি শিয়া-সুন্নি বিতর্কের অন্যতম সংবেদনশীল বিষয়। ঐতিহাসিকভাবে, কিছু শিয়া আলেম (যেমন মোল্লা মুহসিন কাশানি, মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল-কুলাইনী) কুরআনের বিকৃতি বা "তাহরীফ"-এ বিশ্বাস করতেন, যেখানে বলা হয় বর্তমান কুরআনে ত্রুটি রয়েছে বা কিছু আয়াত বাদ পড়েছে (যেমন, আলীর ওয়ালিউল্লাহ সংক্রান্ত আয়াত) 14। কিছু শিয়া সূত্র দাবি করে যে মূল কুরআনে ১৭,০০০ আয়াত ছিল, যা বর্তমান কুরআনের (৬২৩৬ আয়াত) চেয়ে অনেক বেশি 14। সুন্নিরা এই বিশ্বাসকে "শিয়া ধর্মদ্রোহিতার" অন্যতম স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে দেখে 35। তবে, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বর্তমান সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া আলেম এবং সুন্নি আলেম উভয়ই বর্তমান কুরআনের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস করেন এবং এটিকে অবিকৃত মনে করেন 7। "আম্মান বার্তা" স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবই কোরআনকে অবিকৃত মনে করে 13। কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে ঐতিহাসিক বিতর্ক রয়েছে 14। কিছু ঐতিহাসিক শিয়া উৎস এবং আলেমদের উদ্ধৃতিতে কুরআনের বিকৃতির কথা বলা হয়েছে, যেমন আয়াত সংখ্যা ১৭,০০০ হওয়া বা আলীর ওয়ালিউল্লাহ সংক্রান্ত আয়াত মুছে ফেলার অভিযোগ 14। এটি সুন্নিদের কাছে "শিয়া ধর্মদ্রোহিতার" অন্যতম স্পষ্ট উদাহরণ 35। এই অভিযোগগুলি মুসলিম বিশ্বের মধ্যে গভীর বিভেদ ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। তবে, আধুনিক যুগে অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি আলেমই বর্তমান কুরআনের বিশুদ্ধতায় বিশ্বাস করেন এবং এটিকে অবিকৃত মনে করেন 7। "আম্মান বার্তা"র মতো উদ্যোগগুলো এই বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়েছে 13, যা এই দীর্ঘস্থায়ী বিতর্কের একটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে। এই বিতর্কটি কেবল ধর্মতাত্ত্বিক নয়, এটি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস ও শত্রুতার জন্ম দিয়েছে। তবে, বর্তমান সময়ে বিশুদ্ধতা নিয়ে ঐকমত্যের প্রচেষ্টা 35 একটি ইতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে, যা পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এটি দেখায় যে ঐতিহাসিক মতভেদ থাকা সত্ত্বেও, মূলধারার আলেমদের মধ্যে ঐক্যের একটি প্রবণতা রয়েছে, যা মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আশাব্যঞ্জক।

      হাদিস: শিয়া ও সুন্নিদের হাদিস গ্রন্থ ভিন্ন এবং তারা হাদিস সংগ্রহের জন্য ভিন্ন উৎস ও মানদণ্ড ব্যবহার করে 7। সুন্নিরা নবীর সাহাবীদের থেকে বর্ণিত হাদিস অনুসরণ করে (যেমন সিহাহ সিত্তাহ - সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ইত্যাদি), যখন শিয়ারা আহলে বাইত এবং নবীর পরিবারের নির্দিষ্ট সদস্যদের হাদিস অনুসরণ করে 7। শিয়ারা কিছু সাহাবী (যেমন আয়েশা, আবু হুরাইরা) থেকে আসা হাদিস বর্জন করে, কারণ তারা তাদের নির্ভরযোগ্য মনে করে না 15। শিয়াদের প্রধান হাদিস গ্রন্থগুলো হলো কিতাব আল-কাফী, মান লা ইয়াহদুরুহু আল-ফকীহ, তহজীব আল-আহকাম, এবং আল-ইস্তিবসার 42

সারণী ১: সুন্নি ও শিয়াদের প্রধান হাদিস গ্রন্থসমূহ

সম্প্রদায়

প্রধান হাদিস গ্রন্থসমূহ

সংকলক

হাদিস সংখ্যা (আনুমানিক)

শিয়া

কিতাব আল-কাফী

মুহম্মদ ইবনে ইয়াকুব আল-কুলায়নী

১৬,১৯৯ 43

 

মান লা ইয়াহদুরুহু আল-ফকীহ

শেখ সদুক

৯,০৪৪ 43

 

তহজীব আল-আহকাম

শেখ তুসী

১৩,৫৯০ 43

 

আল-ইস্তিবসার

শেখ তুসী

৫,৫১১ 43

সুন্নি

সহীহ বুখারী

ইমাম বুখারী

৭,২৭৫ 42

 

সহীহ মুসলিম

মুসলিম বিন হাজ্জাজ

৯,২০০ 42

 

সুনানে নাসাই

ইমাম নাসাই

৫,৭৫৮ 42

 

সুনান আবু দাউদ

আবু দাউদ

৫,১৮৪ 42

 

সুনান আল-তিরমিজী

মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি

৩,৬০৮ 42

 

সুনান ইবনে মাজাহ

ইবনে মাজাহ

৪,৩৪১ 42

এই সারণীটি উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় জ্ঞান ও আইনের উৎসগুলোর ভিন্নতা তুলে ধরে। এটি দেখায় কিভাবে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ এবং জ্ঞানের উৎস ভিন্নতা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এবং তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে।

৩.৫. উৎসব ও স্মরণীয় দিন

      মুহাররম (আশুরা): এটি শিয়াদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিন, যা মুহাররম মাসের দশম দিনে পালিত হয় 44। এই দিনে ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর কারবালার শাহাদাতকে স্মরণ করে শিয়ারা শোক প্রকাশ করে এবং বিভিন্ন শোকযাত্রা ও তা'জিয়া (প্যাশন নাটক) আয়োজন করে 45। সুন্নিরাও এই ঘটনাকে মর্মান্তিক মনে করে 45

      ঈদে গাদীরে খুম: শিয়ারা জিলহজ্ব মাসের ১৮ তারিখে এই দিনটিকে ঈদ হিসেবে পালন করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে এই দিনেই নবী (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে তাঁর উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেছিলেন 19। তারা এটিকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চেয়েও উত্তম মনে করে 19

      ঈদে বাবা সুজাউদ্দিন: শিয়ারা ৯ই রবিউল আউয়াল তারিখে হযরত ওমর (রাঃ)-এর হত্যাকারী আবু লুলুকে "বাবা সুজাউদ্দিন" (দ্বীনের বীর) উপাধি দিয়ে ঈদ পালন করে 19। এই উৎসব সুন্নিদের কাছে অত্যন্ত বিতর্কিত এবং নিন্দনীয় 19

      নওরোজ উৎসব: এটি মূলত ইরানের অগ্নি উপাসকদের একটি প্রাচীন নববর্ষ উৎসব হলেও, শিয়ারা এই দিনটিকে সম্মান করে এবং পালন করে 19

 

৪. শিয়াদের বাসস্থান কোথায় কোথায়?

৪.১. বিশ্বব্যাপী শিয়া জনসংখ্যার আনুমানিক অনুপাত

বিশ্বের মোট মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ১০-১৫% শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত 2। এর বিপরীতে, সুন্নি মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৮৫-৯০% গঠন করে 2

৪.২. শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ

বিশ্বে মাত্র চারটি দেশে শিয়া সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ: ইরান, ইরাক, আজারবাইজান ও বাহরাইন 4। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ইরান বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে শিয়া ইসলাম দেশটির আইন ও শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে 16। ১৬শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে সফবীয় রাজবংশের অধীনে ইরান একটি প্রাক্তন সুন্নি-গরিষ্ঠ অঞ্চল থেকে জোরপূর্বক শিয়া ইসলামে ধর্মান্তরকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল 1

৪.৩. উল্লেখযোগ্য শিয়া জনগোষ্ঠীর দেশসমূহ

লেবানন একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায় সুন্নিদের তুলনায় সংখ্যায় বেশি, যা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নির্দেশ করে 4। এছাড়াও, ইয়েমেন, কুয়েত, সৌদি আরব, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে উল্লেখযোগ্য শিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে 5। সৌদি আরবে শিয়া নাগরিকদের সংখ্যা ২-৪ মিলিয়ন অনুমান করা হয়, যা স্থানীয় জনসংখ্যার প্রায় ১৫%। এদের মধ্যে পূর্ব প্রদেশের দ্বাদশী বাহরানা, মদিনার নাখাবিলা এবং নাজরানের ইসমাইলি সুলায়মানি ও জায়েদি সম্প্রদায় উল্লেখযোগ্য 16। পাকিস্তানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুন্নি জনগোষ্ঠী থাকলেও, ভারতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিয়া মুসলিম (বারো ইমাম) জনগোষ্ঠী বাস করে 11। সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনেও প্রচুর শিয়া জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি রয়েছে 5

শিয়াদের ভৌগোলিক বন্টন 4 দেখায় যে তারা নির্দিষ্ট কিছু দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং অন্যান্য দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু। ইরান, ইরাক, আজারবাইজান, বাহরাইন এবং লেবাননে শিয়াদের ঘনত্ব বেশি। এই ভৌগোলিক ঘনত্ব, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের উপর গভীর ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ফেলে। ইরান একটি শিয়া-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে শিয়া মতবাদের প্রসার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে 16। এর ফলে ইরান-সৌদি আরব দলীয় বিরোধের মতো সংঘাত সৃষ্টি হয়, যা শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় 11। ইরাক যুদ্ধ এবং স্বঘোষিত আইএসআইএস-এর মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান শিয়াদের বিরুদ্ধে গণহত্যার কারণ হয়েছে 11, যা এই ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ভয়াবহ পরিণতি নির্দেশ করে। এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে, ধর্মীয় পরিচয় কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাস নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় নীতি, আঞ্চলিক জোট এবং আন্তর্জাতিক সংঘাতের একটি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। এই বিশ্লেষণ কেবল শিয়াদের অবস্থান তালিকাভুক্ত করে না, বরং দেখায় কিভাবে তাদের জনসংখ্যাগত বন্টন আঞ্চলিক ক্ষমতা সংগ্রাম, সংঘাত এবং নিপীড়নের সাথে জড়িত। এটি "শিয়া কি মুসলিম?" এই প্রশ্নের উত্তরকে আরও জটিল করে তোলে, কারণ ধর্মীয় পরিচয় প্রায়শই রাজনৈতিক আনুগত্য এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে মিশে যায়, যা প্রায়শই সংঘাতের কারণ হয়।

সারণী ২: বিশ্বে শিয়া জনগোষ্ঠীর ভৌগোলিক বন্টন

দেশ

শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা/উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

আনুমানিক জনসংখ্যার শতাংশ (যদি উপলব্ধ থাকে)

ইরান

সংখ্যাগরিষ্ঠ

-

ইরাক

সংখ্যাগরিষ্ঠ

-

আজারবাইজান

সংখ্যাগরিষ্ঠ

-

বাহরাইন

সংখ্যাগরিষ্ঠ

-

লেবানন

সংখ্যালঘু (সুন্নিদের তুলনায় সংখ্যায় বেশি)

-

ইয়েমেন

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

-

কুয়েত

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

-

সৌদি আরব

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

১৫% (২-৪ মিলিয়ন) 16

তুরস্ক

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

-

আফগানিস্তান

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

-

পাকিস্তান

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

-

ভারত

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি (দ্বিতীয় বৃহত্তম শিয়া জনগোষ্ঠী)

- 11

সিরিয়া

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

- 5

জর্ডান

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

- 5

ফিলিস্তিন

উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি

- 5

এই সারণীটি পাঠকদের জন্য তথ্যকে সুসংগঠিত করবে এবং বিভিন্ন দেশের শিয়া জনসংখ্যার তুলনামূলক ধারণা দেবে। ভূ-রাজনৈতিক আলোচনায় এটি একটি শক্তিশালী রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে, যা পাঠকদের আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট এবং শিয়া-সুন্নি সম্পর্কের জটিলতা বুঝতে সাহায্য করবে। এটি দেখায় যে কীভাবে জনসংখ্যাগত বন্টন ক্ষমতা এবং সংঘাতের গতিপথকে প্রভাবিত করে।

৫. শিয়া কি মুসলিম?

৫.১. ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে শিয়া ও সুন্নিদের মিল

শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ই ইসলামের মৌলিক নীতি যেমন তাওহিদ বা একেশ্বরবাদ (আল্লাহর একত্ব), নবুওয়াত (মুহাম্মদের নবীত্ব), কিয়ামত বা পুনরুত্থানে বিশ্বাসী 11। তারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শেষ নবী ও রাসূল মনে করে এবং তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না বলে বিশ্বাস করে 10। উভয় মাজহাবই পবিত্র কোরআনকে আল্লাহর বাণী এবং অবিকৃত মনে করে (যদিও ঐতিহাসিকভাবে কুরআনের বিশুদ্ধতা নিয়ে কিছু বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, বর্তমান মূলধারার বিশ্বাস হলো কুরআন সম্পূর্ণ ও বিশুদ্ধ) 7। উভয় মাজহাবই বিশুদ্ধ হাদীসকে মান্য করতে বলে, যদিও তাদের হাদিসের উৎস ভিন্ন 13। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মৌলিক ইবাদত যেমন নামাজ কায়েম করা, রোজা রাখা, যাকাত দেয়া, হজ্ব পালন, অতীতের নবী–রাসূলদের স্বীকৃতি দেয়া ইত্যাদিকে তারা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অংশ মনে করে 13। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" - এই শাহাদা উচ্চারণকারী মুসলিম। শিয়ারাও এই ঘোষণা দেয়, যদিও তারা "আলীউন ওয়ালীউল্লাহ" বাক্যটি যোগ করে 5

৫.২. বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারদের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিতর্ক (শিয়াদের মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি)

"শিয়া কি মুসলিম?" এই প্রশ্নটি মুসলিম বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিতর্কিত। কিছু সুন্নি স্কলার শিয়াদেরকে অমুসলিম বা ধর্মদ্রোহী (কাফের) হিসেবে ঘোষণা করেছেন, বিশেষত তাদের ইমামত, তাকিয়া, সাহাবীদের সমালোচনা এবং কুরআনের বিকৃতি সংক্রান্ত কিছু ঐতিহাসিক ও বিতর্কিত বিশ্বাসের কারণে 14। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে তাইমিয়া শিয়াদেরকে ইহুদি, খ্রিস্টান ও বহুত্ববাদীদের চেয়েও বেশি ধর্মদ্রোহী মনে করতেন 47। অন্যদিকে, অনেক মূলধারার ইসলামিক স্কলার মনে করেন যে যারা ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোতে বিশ্বাস করে এবং শাহাদা উচ্চারণ করে, তারা মুসলিম 9। কিছু সূত্র মতে, শিয়া-সুন্নি বিভাজন ইসলামে সুস্পষ্ট হারাম এবং এটি সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট একটি ফিতনা, যা মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায় 5

"তারা কি মুসলিম?" একটি মৌলিক কিন্তু জটিল প্রশ্ন। প্রাথমিক তথ্য 13 দেখায় যে শিয়া ও সুন্নি উভয়ই ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোতে (আল্লাহর একত্ব, নবুওয়াত, কুরআন, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, কিয়ামত) বিশ্বাসী। এই মৌলিক মিল থাকা সত্ত্বেও, কিছু সুন্নি আলেম শিয়াদেরকে অমুসলিম বা ধর্মদ্রোহী হিসেবে গণ্য করেন, বিশেষত তাদের ইমামত, তাকিয়া এবং কুরআনের বিকৃতি সংক্রান্ত কিছু ঐতিহাসিক অভিযোগের ভিত্তিতে 14। এই মতানৈক্য "মুসলিম" পরিচয়ের একটি অভ্যন্তরীণ বিতর্ককে তুলে ধরে, যেখানে ধর্মতাত্ত্বিক ও ফিকহী পার্থক্যগুলো প্রায়শই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভেদকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এটি দেখায় যে, একটি ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব কীভাবে "কে মুসলিম" এই মৌলিক প্রশ্নটিকে জটিল করে তোলে, যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা এবং রাজনৈতিক আনুগত্য একে অপরের সাথে জড়িত। এই বিশ্লেষণ কেবল "হ্যাঁ" বা "না" উত্তর না দিয়ে "মুসলিম" পরিচয়ের বহুমাত্রিকতা এবং মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের গভীরতা তুলে ধরে। এটি দেখায় যে ধর্মীয় পরিচয় কেবল বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না, বরং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং আলেমদের ব্যাখ্যার উপরও নির্ভরশীল। এটি পারস্পরিক "তাকফির" (কাফের ঘোষণা) এর বিপদ এবং "আম্মান বার্তা"র মতো ঐক্যের প্রচেষ্টার গুরুত্বকে স্পষ্ট করে, যা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শান্তি ও সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য।

 

৫.৩. "আম্মান বার্তা" (Amman Message) এবং এর মাধ্যমে শিয়া মাযহাবের (জাফরী) আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

২০০৪ সালে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত "আম্মান বার্তা" (Amman Message) মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের দিকে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ 50। এই বার্তাটি আটটি প্রামাণ্য ইসলামিক মাযহাবের (আইনি স্কুল) বৈধতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যার মধ্যে চারটি সুন্নি মাযহাব (হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হাম্বলী) এবং দুটি শিয়া মাযহাব (জাফরী ও জায়েদি) অন্তর্ভুক্ত 50। এটি বিশ্বের ৫৫০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় মুসলিম পণ্ডিতের সর্বসম্মত সমর্থন লাভ করেছে এবং মুসলিমদের মধ্যে "তাকফির" (এক মুসলিমকে অন্য মুসলিমকে কাফের ঘোষণা করা) নিষিদ্ধ করেছে 50। "আম্মান বার্তা"র লক্ষ্য ছিল ইসলামের প্রকৃত প্রকৃতি স্পষ্ট করা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহাবস্থানকে উৎসাহিত করা, যা আধুনিক বিশ্বে চরমপন্থা মোকাবেলায় সহায়ক 50

"আম্মান বার্তা" 50 শিয়া (জাফরী ও জায়েদি) সহ আটটি প্রধান মাযহাবের বৈধতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মুসলিমদের মধ্যে তাকফির নিষিদ্ধ করেছে। এটি এক সহস্রাব্দে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক, বহুত্ববাদী পারস্পরিক স্বীকৃতি। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিরসনে একটি ভিত্তি প্রদান করেছে। তবে, এই বার্তাটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হলেও, বাস্তবে শিয়া-সুন্নি সংঘাত (যেমন ইরান-সৌদি আরব বিরোধ, ইরাক যুদ্ধ, আইএসআইএস-এর গণহত্যা 11) এখনও বিদ্যমান, যা এই ঐকমত্যের বাস্তব প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ধর্মীয় নেতৃত্ব কর্তৃক ঘোষিত ঐকমত্যের পরেও, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, ঐতিহাসিক বিদ্বেষ এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রভাব এখনও বিভেদ সৃষ্টিতে সক্ষম। এটি একটি জটিল বাস্তবতা যেখানে ধর্মীয় আদর্শ এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে একটি টানাপোড়েন বিদ্যমান। এই বিশ্লেষণ "আম্মান বার্তা"র ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং এর ইতিবাচক প্রভাবকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু একই সাথে এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ এবং মুসলিম বিশ্বের জটিল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে। এটি দেখায় যে ধর্মীয় ঐক্য প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের মূল কারণগুলো (যেমন রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, ঐতিহাসিক বিদ্বেষ) সমাধান না হলে তা পুরোপুরি সফল নাও হতে পারে।

৫.৪. এই প্রশ্নের সংবেদনশীলতা এবং ঐক্যের গুরুত্ব

 

"শিয়া কি মুসলিম?" প্রশ্নটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিতর্কিত, যা মুসলিম বিশ্বে বিভেদ ও সংঘাতের জন্ম দিয়েছে এবং ঐতিহাসিক নিপীড়নের কারণ হয়েছে 11। পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহনশীলতা এবং ঐক্যের গুরুত্ব "আম্মান বার্তা"র মতো উদ্যোগগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক 24। এই বার্তাটি মুসলিমদের মধ্যে "তাকফির" নিষিদ্ধ করেছে এবং বিভিন্ন মাযহাবের বৈধতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে 50। ঐক্য বজায় রাখা এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী অপশক্তির (যেমন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বা চরমপন্থী গোষ্ঠী) বিরুদ্ধে সচেতন থাকা মুসলিম উম্মাহর জন্য অপরিহার্য, কারণ এই বিভাজন প্রায়শই বাইরের শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হয় 5। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও শিয়া বা সুন্নি ছিলেন না; তিনি ছিলেন মুসলিম। মুসলিম হতে হলে আল্লাহর একত্ববাদ, সৎকাজ এবং পরকালে বিশ্বাস করতে হবে 14

৬. উপসংহার

৬.১. শিয়া ও সুন্নি বিভাজনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বর্তমান প্রভাবের সারসংক্ষেপ

শিয়া ও সুন্নি বিভাজন ইসলামের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে শুরু হয়েছিল এবং সময়ের সাথে সাথে ধর্মতাত্ত্বিক, আইনগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতায় রূপান্তরিত হয়েছে 2। এই বিভাজন মুসলিম বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে সংঘাত ও নিপীড়নের জন্ম দিয়েছে, যেমন বাহরাইনি অভ্যুত্থান, ইরাক যুদ্ধ এবং আইএসআইএস-এর কার্যক্রম 11

৬.২. পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহাবস্থানের গুরুত্ব

ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, যা ঐক্যের ভিত্তি হতে পারে। উভয় সম্প্রদায়ই আল্লাহর একত্ববাদ, নবী মুহাম্মদের (সাঃ) রিসালাত, এবং পবিত্র কুরআনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে 2। "আম্মান বার্তা"র মতো উদ্যোগগুলো পারস্পরিক স্বীকৃতি ও সহাবস্থানের পথ প্রশস্ত করেছে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক 50। এই বার্তাটি মুসলিমদের মধ্যে "তাকফির" নিষিদ্ধ করেছে এবং বিভিন্ন মাযহাবের বৈধতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে 50। ঐক্য বজায় রাখা এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী অপশক্তির (যেমন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বা চরমপন্থী গোষ্ঠী) বিরুদ্ধে সচেতন থাকা মুসলিম উম্মাহর জন্য অপরিহার্য, কারণ এই বিভাজন প্রায়শই বাইরের শক্তির দ্বারা ব্যবহৃত হয় 5

উপসংহারে এসে দেখা যায় যে, একদিকে "আম্মান বার্তা"র মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের পারস্পরিক স্বীকৃতির একটি ভিত্তি তৈরি হয়েছে 50, যা ঐক্যের একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। এটি ধর্মীয় পণ্ডিতদের মধ্যে ঐকমত্যের একটি প্রমাণ। অন্যদিকে, ঐতিহাসিক ও চলমান ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত (যেমন ইরান-সৌদি আরব বিরোধ, ইরাক যুদ্ধ, আইএসআইএস-এর উত্থান) এবং কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার 11 এখনও বিভাজনকে জিইয়ে রেখেছে। এই পরিস্থিতি একটি জটিল ভারসাম্য নির্দেশ করে: ধর্মীয় নেতৃত্ব ও পণ্ডিতদের মধ্যে ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা প্রায়শই সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি প্রমাণ করে যে, কেবল ধর্মতাত্ত্বিক ঐকমত্যই যথেষ্ট নয়, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক সহনশীলতার মতো বিষয়গুলোও মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির জন্য অপরিহার্য। এই বিশ্লেষণ কেবল বিদ্যমান তথ্যকে পুনরাবৃত্তি করে না, বরং একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে শিয়া-সুন্নি সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করে। এটি বোঝায় যে ঐক্য একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা কেবল ধর্মতাত্ত্বিক ঐকমত্যের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক সহনশীলতার উপরও নির্ভর করে।

Works cited

1.     শিয়া ইসলামের ইতিহাস - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8

2.     মুসলিমদের মাঝে শিয়া, সুন্নি এগুলো আসলে কী আর এদের মধ্যে পার্থক্য কী আর এর পটভূমিই বা কী?, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9D%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF

3.     শিয়াদের উৎপত্তি কিভাবে? বিস্তারিত জানাবেন কি? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87

4.     সুন্নি ও শিয়া : জন ম্যাকহুগো - Sunnis and Shiis : John McHugo - PBS Book Shop, accessed June 19, 2025, https://pbs.com.bd/book/2401162/sunnis-and-shiis

5.     শিয়া বিতর্ক ও তাদের প্রধান মতাদর্শ - The Daily Campus, accessed June 19, 2025, https://thedailycampus.com/mukto-column/36343/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95-%E0%A6%93-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6

6.     শিয়া মুসলিম কাদের বলা হয়? বিস্তারিত জানাতে পারবেন কি? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/siya-musalima-kadera-bala-haya-bistarita-janate-parabena-ki

7.     সুন্নি ও শিয়া ইসলামের মূল পার্থক্যগুলি কী কী? : r/religion - Reddit, accessed June 19, 2025, https://www.reddit.com/r/religion/comments/rcqjc4/what_are_the_primary_differences_between_sunni/?tl=bn

8.     শিয়া, সুন্নি, আহমদিয়া, হানাফিয়া এসবের পার্থক্য কী কী কেউ একটু এক্সপ্লেইন করবেন? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE

9.     মুসলিমদের মাঝে সুন্নি, ওয়াহবি, আহলে-হাদিস প্রভৃতি বিভাগগুলো কারা করেছে? এইসব বিভাগ ... - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9D%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF

10.  শিয়া-সুন্নি বিভাজনের মূল কারণ কী? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2

11.  শিয়া–সুন্নি সম্পর্ক - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E2%80%93%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF_%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95

12.  সিয়া এবং সুন্নীর মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা কি ইরানের (সিয়া) পাশে দাঁড়াতে পারি? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87

13.  ইসলামের স্বীকৃত জাফরী মাযহাব - Official Website of The Fajr -, accessed June 19, 2025, https://thefajr.com/bangla/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AE%E0%A6%BE/

14.  শিয়ারা কি মুসলমান? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/siyara-ki-musalamana

15.  প্রশ্ন শিয়া আর সুন্নি কারা? এদের মধ্যে পার্থক্য কী? কুর্দি কাদেরকে বলে? ইয়াজিদি কারা, accessed June 19, 2025, https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Bokshmujib/30069648

16.  শিয়া ইসলাম - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE

17.  ইসলামি সম্প্রদায় ও শাখা - Wikiwand, accessed June 19, 2025, https://www.wikiwand.com/bn/articles/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BF_%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%93_%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BE

18.  ইমামত (শিয়া তত্ত্ব) - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%A4_(%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%A4%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC)

19.  শিয়াদের পৃথক আচার অনুষ্ঠান ও পৃথক শরীয়তী বিধান - Sunnibarta, accessed June 19, 2025, https://www.sunnibarta.com/issue/books/Shea_Porichete/09.pdf

20.  ইমামীয়া জাফরী মাজহাব-পর্ব-৩, accessed June 19, 2025, https://erfan.ir/bengali/81957.html

21.  শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে পার্থক্য, accessed June 19, 2025, https://erfan.ir/bengali/81955.html

22.  শিয়া আর সুন্নি কারা ? এদের মধ্যে পার্থক্য কী ? কুর্দি কাদেরকে বলে ? জানুন বিস্তারিত, accessed June 19, 2025, https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/NISHACHORSS/30103410

23.  Hajj Practices by Sunni and Shia: Key Differences Explained, accessed June 19, 2025, https://www.airlinkhajjandumrah.com/hajj-practices-by-sunni-and-shia-key-differences-explained/

24.  Hajj Different for Sunni and Shia Muslims: Key Insights Explained, accessed June 19, 2025, https://www.airlinkhajjandumrah.com/hajj-different-for-sunni-and-shia-muslims-key-insights-explained/

25.  শিয়াদের মতে মুত'আ বিয়ের রুকন ও তার বিধানসমূহ: | শিয়া আকিদার অসারতা - Hadithbd, accessed June 19, 2025, https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=153&chapter=12713

26.  মুত'আ বিয়ের আকিদা ও তাদের মতে তার ফযিলতসমূহ: | শিয়া আকিদার অসারতা - বাংলা হাদিস, accessed June 19, 2025, https://www.hadithbd.com/books/detail/?book=153§ion=2232

27.  Criticism of Twelver Shia Islam - Wikipedia, accessed June 19, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Criticism_of_Twelver_Shia_Islam

28.  শীয়া মতবাদঃ বিবাদ বনাম ভ্রষ্টতা - [বই রিভিউ - ৯] - শিয়াদের ভ্রান্ত বিশ্বাস, accessed June 19, 2025, https://hellohasan.com/2021/07/09/%E0%A6%B6%E0%A7%80%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%89/

29.  শিয়া সম্প্রদায়ের কিছু ভ্রান্ত ও কুফুরী আকিদা - Ourislam24.com, accessed June 19, 2025, https://www.ourislam24.com/2022/08/19/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%AD%E0%A7%8D

30.  তাকিয়া - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE

31.  Taqiyya - Wikipedia, accessed June 19, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Taqiyya

32.  Al-Taqiyya, Dissimulation Part 1 | A Shi'ite Encyclopedia - Al-Islam.org, accessed June 19, 2025, https://al-islam.org/shiite-encyclopedia/al-taqiyya-dissimulation-part-1

33.  বর্তমানে বিদ্যমান কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত: - বাংলা হাদিস, accessed June 19, 2025, https://www.hadithbd.com/books/link/?id=12701

34.  শিয়া মুসলমানদের সম্পর্কে আমরা কতখানি জানি? - সুষুপ্ত পাঠক-এর ব্লগ, accessed June 19, 2025, https://pathoksusupto.wordpress.com/2022/07/26/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87/

35.  Shia view of the Quran - Wikipedia, accessed June 19, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Shia_view_of_the_Quran

36.  শিয়া মুসলমানরা কি সুন্নি মুসলমানদের মতো একই কুরআান অনুসরণ করে? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF

37.  সুন্নী সমাজে শিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা অভিযোগ - AmaderShomoy.com, accessed June 19, 2025, https://www.amadershomoy.com/islam/article/124848/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%BE

38.  শিয়াদের কুরআনে আয়াত সংখ্যা কত? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE

39.  DISTORTION - WHAT DO SHIA AND SUNNI BELIEVE?, accessed June 19, 2025, https://afosa.org/distortion-what-do-shia-and-sunni-believe/

40.  Beliefs: Do the Shi'ah Believe in a Different Quran | Al-Islam.org, accessed June 19, 2025, https://al-islam.org/articles/beliefs-do-shiah-believe-different-quran

41.  Chapter Four: Shia scholars about the completeness of Quran - Shia Pen, accessed June 19, 2025, https://shiapen.com/blog/chapter-four-shia-scholars-about-the-completeness-of-quran

42.  শিয়া মাজহাব কোন হাদিস বই অনুসরণ করে? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%87

43.  শিয়াদের কি আমাদের থেকে ভিন্ন আলাদা হাদিসগ্রন্থ রয়েছে? শিয়াদের কিছু হাদিসগ্রন্থের নাম বলবেন কি? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87

44.  শিয়ারা এবং সুন্নিরা মোট কতগুলো উৎসব পালন করে ? পরিসংখ্যার সাথে নির্দিষ্ট নাম বলবেন। ইসলামে এই উৎসবগুলোর নাম কি উল্লেখিত রয়েছে ? নাকি তারা নিজেরাই এগুলো বানিয়েছে ? - Quora, accessed June 19, 2025, https://bn.quora.com/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9F

45.  কারবালার যুদ্ধ - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0_%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7

46.  মহরমের শোক - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%95

47.  Sunni fatwas on Shias - Wikipedia, accessed June 19, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Sunni_fatwas_on_Shias

48.  শিয়া আকিদার অসারতা | সম্পূর্ণ গ্রন্থ একসাথে পড়ুন - বাংলা হাদিস, accessed June 19, 2025, https://www.hadithbd.com/books/fullbook/?pageNum_bookData=1&totalRows_bookData=26&book=153

49.  শিয়া ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কিত - Qadri's bangla blog, accessed June 19, 2025, https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Qadri/29960010

50.  Amman Message – The Official Site, accessed June 19, 2025, https://ammanmessage.com/

51.  The Amman Message: Building Islamic Unity in a Divided World - ResearchGate, accessed June 19, 2025, https://www.researchgate.net/publication/389399635_The_Amman_Message_Building_Islamic_Unity_in_a_Divided_World

52.  শিয়াবিদ্বেষ - উইকিপিডিয়া, accessed June 19, 2025, https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B7

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url