৮ম শ্রেণি: ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা প্রথম অধ্যায়- আকাইদ বিষয়-সংক্ষেপ

প্রথম অধ্যায়: আকাইদ

৮ম শ্রেণি: ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা প্রথম অধ্যায়- আকাইদ বিষয়-সংক্ষেপ

বিষয়-সংক্ষেপ

ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম মৌলিক কতিপয় বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়।যেমন: আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত, আসিমানি কিতাব, তাকদির, পুনরুত্থান ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।ইসলামের এরূপ মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাসকে আকাইদ বলা হয়। আকাইদ শব্দটি বহুবচন। একবচনে ‘আকিদা’ যার অর্থ বিশ্বাস। আকাইদের বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করা জরুরি। এর কোনো একটিকে অবিশ্বাস করলে কেউ মুসলিম হতে পারে না। এজন্য আকাইদ হলো ইসলামের প্রধান ভিত্তি। তাছাড়া আকাইদের বিষয়গুলো পবিত্র কুরআন হাদীস দ্বারা স্বীকৃত।

পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

ইমান

ইমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। ইসলামের মূল বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাকেই ইমান বলা হয়। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তায়ালা, নবি-রাসুল, ফেরেশতা, আখিরাত, তাকদির ইত্যাদি বিষয় মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়াই হলো ইমান।

ইমানের বিষয়

ইমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বিষয় মোট সাতটি। মুমিন হওয়ার জন্য এ সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। ইমানের বিষয়গুলো হলো- আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস ও মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস।

নিফাক

নিফাক শব্দের অর্থ ভণ্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়।

মুনাফিকদের চরিত্র

মিথ্যা ও প্রতারণা করাই মুনাফিকদের চরিত্র। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলামের কথা স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকদের চরিত্র দেখলে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

নিফাক পরিহার

নিফাক পরিহার করার তিনটি উপায় রয়েছে। উপায়গুলো হলো- (১) কথা বলার সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কথা বলবে না। (২) কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করবে। (৩) আমানত রক্ষা করবে।

আসমাউল হুসনা

আসমাউল হুসনা শব্দের অর্থ সুন্দর নামসমূহ। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নামসমূহকে একত্রে আসমাউল হুসনা বলা হয়। আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালার এরূপ বহু গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরিফেও আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নামের কথা বলা হয়েছে।

রিসালাত

আকাইদের বিষয়সমূহের মধ্যে রিসালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিসালাত অর্থ সংবাদ বহন, খবর বা চিঠি পৌঁছানো। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী, আদেশ-নিষেধ মানুষের নিকট পৌঁছানোকে রিসালাত বলে।

খতমে নবুয়ত

খতম শব্দের অর্থ শেষ, সমাপ্ত। আর নবুয়ত অর্থ পয়গম্বারি, নবিগণের দায়িত্ব ইত্যাদি। সুতরাং খতমে নবুয়ত অর্থ নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি বা নবুয়তের সমাপ্তি। মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। নবুয়ত তথা নবি-রাসুল আগমনের ক্রমধারার পরিসমাপ্তিকেই খতমে নবুয়ত বলা হয়।

আখিরাত

আখিরাত হলো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। বাংলা ভাষায় একে পরকাল বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের যে নতুন জীবন শুরু হয় তা-ই পরকাল বা আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই।

শাফাআত

শাফাআত শব্দের অর্থ সুপারিশ করা, অনুরোধ করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট নবি-রাসুলগণের সুপারিশ করাকে শাফাআত বলে।

জান্নাত

জান্নাত শব্দের অর্থ বাগান, উদ্যান, আবৃত স্থান। ফারসি ভাষায় একে বলা হয় বেহেশত। বাংলায় একে বলা হয় স্বর্গ। ইসলামি পরিভাষায়, আখিরাতে ইমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে চিরশান্তির আবাসস্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে তাকে জান্নাত বলা হয়।

জাহান্নাম

জাহান্নাম হলো আগুনের গর্ত, শাস্তির স্থান। একে দোযখ বা নরকও বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় আখিরাতে কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে তাকে জাহান্নাম বলা হয়।

ইমান ও নৈতিকতা

ইমান হলো বিশ্বাস। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করাকে ইমান বলা হয়। যে ব্যক্তি ইমান আনে তাকে বলা হয় মুমিন। আর নৈতিকতা হলো নীতিসম্বন্ধীয়, নীতিমূলক কাজে-কর্মে, কথাবার্তায় নীতি ও আদর্শের অনুসরণ করা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url