জরথুস্ত্রবাদ: প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং তার চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার
জরথুস্ত্রবাদ: প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং তার চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার
ভূমিকা:
জরথুস্ত্রবাদ বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী একেশ্বরবাদী ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম, যা তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং অস্তিত্বের এক কেন্দ্রীয় Contraindications দ্বারা চিহ্নিত: এক বিশাল উত্তরাধিকার যা বর্তমানে এক ক্ষয়িষ্ণু বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্বারা পালিত হয় 1। এই ধর্মটি খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলামের চেয়ে বহু শতাব্দী প্রাচীন এবং প্রায়শই বিশ্বের প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হয় 3। এর উৎপত্তি ৩,০০০ বছরেরও বেশি আগে এবং পণ্ডিতদের মতে এর প্রতিষ্ঠাতা, জরথুস্ত্র, প্রায় ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন 3।
ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলামের উপর এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। স্বর্গ, নরক, শয়তান এবং শেষ বিচারের দিনের মতো মৌলিক ধারণাগুলি এই ধর্মের মাধ্যমেই পরবর্তী আব্রাহামীয় ধর্মগুলিতে প্রবেশ করে 1। এটি পশ্চিমা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় চিন্তাধারা গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ, যদিও প্রায়শই অস্বীকৃত, ভূমিকা পালন করেছে।
তবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের সঙ্গে আধুনিক বাস্তবতার এক তীব্র বৈপরীত্য রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে এর অনুসারীর সংখ্যা মাত্র ১,০০,০০০ থেকে ১,২০,০০০-এর মধ্যে এবং বিভিন্ন কারণে এই সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে 1। এই পরিস্থিতিটি এক গভীর বিরোধিতার জন্ম দিয়েছে: যে ধর্ম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মগুলির ভিত্তি স্থাপন করেছিল, সেটি নিজেই আজ অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। এর ধারণাগুলি এতটাই সফলভাবে অন্যান্য ধর্মীয় ব্যবস্থায় গৃহীত হয়েছিল যে মূল উৎসটি প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং এখন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছে। এই ধর্মের ঐতিহাসিক যাত্রা দেখায় যে, যে ঘটনাগুলি এর প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করেছিল (যেমন ব্যাবিলনীয় নির্বাসনের সময় পারস্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইহুদিদের সংযোগ), তার পরেই এমন সব ঘটনা ঘটে যা এর পতনকে ত্বরান্বিত করে (যেমন আরব বিজয় এবং তৎপরবর্তী নিপীড়ন) 6। এই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হলো এই বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে জরথুস্ত্রবাদের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ করা।
পয়গম্বর জরথুস্ত্র এবং এক নতুন ধর্মের সূচনা
প্রাক-জরথুস্ত্রীয় প্রেক্ষাপট: প্রাচীন ইরানি ধর্ম
জরথুস্ত্রের সংস্কার বুঝতে হলে প্রথমে সেই বহু-ঈশ্বরবাদী ধর্মীয় পরিমণ্ডলটি বোঝা প্রয়োজন যেখান থেকে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। এটি ছিল ইন্দো-ইরানীয় দেবতাদের এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচারের এক পূর্ববর্তী জগৎ। প্রাচীন ইরানি ধর্ম ছিল বহু-ঈশ্বরবাদী, যেখানে দেবতাদের (daeva) এবং প্রভুদের (ahura) পূজা করা হতো । এই ধর্ম ভারতের বৈদিক ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল; উভয় ধর্মেই মিত্র (ভারতে Mitra) এবং অগ্নি উপাসনার মতো দেবতাদের পূজা করা হতো এবং একটি পবিত্র পানীয় (ইরানে haoma, ভারতে soma) ব্যবহারের রীতি প্রচলিত ছিল। এই দেবমণ্ডলীর মধ্যে আহুরা মাজদা (AhuraMazdaˉ) পূর্বেই উপস্থিত ছিলেন, তবে তিনি ছিলেন অনেকের মধ্যে প্রধান দেবতা, একমাত্র ঈশ্বর নন । তিনি ছিলেন প্রজ্ঞা ও কল্যাণের দেবতা । সেই সময়ে, কারপান (karpan) নামক পুরোহিত শ্রেণি পশুবলি এবং অন্যান্য উৎসর্গের মাধ্যমে অত্যন্ত ধনী ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।
জরথুস্ত্রের (Zoroaster) জীবন ও উদ্দেশ্য
পণ্ডিতদের মধ্যে জরথুস্ত্রের সময়কাল নিয়ে কোনো ঐক্যমত্য নেই, তবে তাঁর জীবন ও বিপ্লবী উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি প্রচলিত আখ্যান রয়েছে। ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ এবং গাথাগুলির সঙ্গে ঋগ্বেদের সম্পর্কের ভিত্তিতে পণ্ডিতরা সাধারণত তাঁর সময়কাল ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নির্ধারণ করেন 3। তবে গ্রিক এবং পরবর্তী জরথুস্ত্রীয় ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং মহান কুরুশের সমসাময়িক ছিলেন 9। মনে করা হয়, তাঁর জন্মভূমি ছিল বৃহত্তর ইরানের পূর্বাঞ্চলে, সম্ভবত আধুনিক আফগানিস্তান বা তাজিকিস্তানে 10।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, তিনি পারস্য বংশোদ্ভূত পিতা-মাতা, পুরুশাস্প এবং দুগদোভার ঘরে স্পিতাম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন 3। তাঁর পিতা একজন পুরোহিত ছিলেন এবং জরথুস্ত্রও ১৫ বছর বয়সে পুরোহিত হন 3। তাঁর নাম,
Zaraθusˇtra, এর অর্থ সম্ভবত "যে উট চরাতে পারে", যা তাঁর পারিবারিক পেশার ইঙ্গিত দিতে পারে 3। ৩০ বছর বয়সে, এক বসন্ত উৎসবে যোগ দেওয়ার সময়, তিনি ভোহু মানাহ (VohuManah বা "শুভ মন") নামক এক আলোক সত্তার কাছ থেকে দিব্যদর্শন লাভ করেন। এই সত্তা ছিলেন আহুরা মাজদার দূত এবং তিনি জরথুস্ত্রকে বহু-ঈশ্বরবাদের ভুল সংশোধন করে একমাত্র সত্য ঈশ্বর, আহুরা মাজদার অস্তিত্ব ঘোষণা করার নির্দেশ দেন 3।
তাঁর এই নতুন বার্তা প্রতিষ্ঠিত পুরোহিত শ্রেণির কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, কারণ এটি তাদের ক্ষমতার জন্য হুমকি ছিল 3। তিনি প্রত্যাখ্যাত ও নির্যাতিত হন, যতক্ষণ না তিনি রাজা ভিস্তাস্পকে ধর্মান্তরিত করতে সফল হন। রাজা ভিস্তাস্পের ধর্মান্তর এই নতুন ধর্মের টিকে থাকার জন্য এক নির্ণায়ক মুহূর্ত ছিল 3। জরথুস্ত্রকে কেবল একজন সংস্কারক বললে তাঁর বিপ্লবী ভূমিকার অবমূল্যায়ন করা হয়। তিনি প্রচলিত ধর্মীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। দেবতাদের (daeva) পদাবনত করে দানব হিসেবে আখ্যায়িত করা কোনো সংস্কার নয়, বরং এটি ছিল এক ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লব 9। এই বিপ্লবী অবস্থানই তাঁর প্রাথমিক কঠোর বিরোধিতার কারণ ব্যাখ্যা করে।
জরথুস্ত্রীয় বিভেদ: এক ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লব
জরথুস্ত্রের শিক্ষা অতীত থেকে এক আমূল বিচ্ছেদ ঘটায়, যা ঐশ্বরিক ক্রমকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং মানব জীবনের উদ্দেশ্যকে পুনর্নির্ধারণ করে। তাঁর প্রধান সংস্কার ছিল আহুরা মাজদাকে এক, অদ্বিতীয় এবং সর্বোচ্চ ঈশ্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্য সকল দেবতাকে প্রত্যাখ্যান করা 3। তিনি
daeva শব্দটিকে, যা বৈদিক ঐতিহ্যে "দেবতা" বোঝাত, "দানব" বা অশুভ আত্মা হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করেন 9। এই ভাষাগত পরিবর্তন দুটি ইন্দো-ইরানীয় ধর্মীয় পথের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিভেদ তৈরি করে। এর বিপরীতে, ahura-দের মহিমান্বিত করা হয় 9। তিনি কারপানদের নিষ্ঠুর পশুবলি এবং ধর্মীয় আচারে মাদকদ্রব্য haoma-র ব্যবহারের বিরোধিতা করেন 3। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় আচারের পরিবর্তে সক্রিয়ভাবে সৎ জীবনযাপন করা।
ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তি: নৈতিক দ্বৈতবাদের এক মহাবিশ্ব
আহুরা মাজদা: প্রজ্ঞাময় প্রভু এবং সর্বোচ্চ স্রষ্টা
আহুরা মাজদা ("প্রজ্ঞাময় প্রভু") হলেন এই ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু, যিনি একমাত্র সর্বোচ্চ ঈশ্বর, মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং সকল মঙ্গলের উৎস 3। তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ এবং সর্বত্র বিরাজমান 14। তিনি এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিপূর্ণতার দিকে বিকশিত হওয়ার কথা 17। যেহেতু তিনি সর্বমঙ্গলময়, তাই তাঁর সৃষ্টিও সহজাতভাবে মঙ্গলময় 18। তিনি আমেশা স্পেন্টা (
AmeshaSpenta বা "পবিত্র অমরগণ") নামক দিব্য সত্তাগুলির মাধ্যমে কাজ করেন, যারা তাঁর সৃষ্টি এবং দিব্য গুণাবলীর বিভিন্ন দিককে প্রতিনিধিত্ব করে 11।
মহাজাগতিক সংগ্রাম: জরথুস্ত্রীয় দ্বৈতবাদ
জরথুস্ত্রীয় বিশ্বতত্ত্বের মূলে রয়েছে ভালো এবং মন্দের মধ্যে এক চিরন্তন সংগ্রাম 1। আহুরা মাজদার চিরন্তন প্রতিপক্ষ হলেন আংরা মাইনইউ (
AηgraMainyu বা "ধ্বংসাত্মক আত্মা"), যিনি পরবর্তীকালে আহরিমান নামে পরিচিত হন 3। এই দ্বৈতবাদের ধারণা সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে।
প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে জটিল ধারণাটি সম্ভবত গাথা থেকে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে আহুরা মাজদা দুই যমজ আত্মা সৃষ্টি করেছিলেন: স্পেন্টা মাইনইউ (SpentaMainyu বা পবিত্র আত্মা) এবং আংরা মাইনইউ (AηgraMainyu) 9। অস্তিত্বের শুরুতে এই দুই আত্মা জীবন ও মৃত্যু, ভালো ও মন্দের মধ্যে একটিকে বেছে নিয়েছিল। আংরা মাইনইউ-এর মূল প্রকৃতি হলো দ্রুজ (Druj) বা "মিথ্যা", যা লোভ, ক্রোধ এবং হিংসা হিসেবে প্রকাশিত হয় 9। এই ধারণাটি দার্শনিক দিক থেকে জটিল, কারণ এটি মন্দের উৎসকে সর্বোচ্চ ঈশ্বরের সৃষ্টির কাঠামোর মধ্যেই রাখে, কিন্তু তা এক স্বাধীন ইচ্ছার ফল হিসেবে দেখায়।
পরবর্তীকালে একটি সরল দ্বৈতবাদী ধারণা জনপ্রিয় হয়, যেখানে আহুরা মাজদা স্বয়ং মঙ্গলের শক্তি এবং আহরিমান তাঁর চিরন্তন, সমকক্ষ অশুভ প্রতিপক্ষ হিসেবে চিত্রিত হন 9। এই সংস্করণটিই প্রাচীন গ্রিকদের কাছে জরথুস্ত্রবাদকে "দ্বৈতবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আদর্শ" হিসেবে পরিচিত করে তুলেছিল 2। এই সরলীকৃত দ্বৈতবাদ একটি রাষ্ট্রধর্মের জন্য প্রয়োজনীয় স্পষ্ট এবং ঐক্যবদ্ধ মতাদর্শ গঠনে সহায়ক হয়েছিল। আধুনিক পার্সিরা আহরিমানের ভূমিকাকে হ্রাস করে তাকে মানবজাতির অশুভ প্রবণতার রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, যার মাধ্যমে আহুরা মাজদার চূড়ান্ত সর্বশক্তিমত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় 9।
আশা ও দ্রুজ: বাস্তবতার বুনন
এই মহাজাগতিক সংগ্রাম কেবল দুটি সত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দুটি মৌলিক নীতির মধ্যে বিদ্যমান যা অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে: আশা (Asˇa) এবং দ্রুজ (Druj)। আশা হলো দিব্য আইন বা পরিকল্পনা, ধার্মিকতা এবং "সঠিকতা"-র নীতি, যার মাধ্যমে সবকিছু একটি নিখুঁত জগতে যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন থাকে 7। অন্যদিকে, দ্রুজ হলো মিথ্যা, প্রতারণা এবং বিশৃঙ্খলা—আংরা মাইনইউ-এর মূল প্রকৃতি 7। জীবনের উদ্দেশ্য হলো আশাকে সমর্থন করা এবং দ্রুজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা 21।
মানবজাতির ভূমিকা: স্বাধীন ইচ্ছার মতবাদ
জরথুস্ত্রীয় ধর্মতত্ত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ এই মহাজাগতিক যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় দর্শক নয়, বরং স্বাধীন ইচ্ছায় সজ্জিত সক্রিয় এবং দায়িত্বশীল অংশগ্রহণকারী 3। প্রতিটি ব্যক্তির ভালো (আহুরা মাজদার পথ) এবং মন্দ (আংরা মাইনইউ-এর পথ) বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে 1। এই সংগ্রাম আত্মা ও দেহের মধ্যে নয়, কারণ জরথুস্ত্রবাদে জাগতিক বিশ্বকে আহুরা মাজদার এক শুভ সৃষ্টি হিসেবে দেখা হয় এবং উপবাস বা কৌমার্যের মতো বিষয়গুলি সাধারণত অনুৎসাহিত করা হয় 9। মাশ্যা এবং মাশ্যানা, প্রথম মানব দম্পতির পৌরাণিক কাহিনীটি এই ধারণার প্রতীক। আহুরা মাজদা তাদের সৃষ্টি করে ভালো কাজ করার নির্দেশ দিলেও, আংরা মাইনইউ তাদের প্রতারিত করে মিথ্যা বলায় প্ররোচিত করে, যা মানবজাতির সঙ্গে মন্দের সংগ্রামের সূচনা করে 15।
পরকালবিদ্যা: চূড়ান্ত হিসাব
জরথুস্ত্রবাদ এক বিস্তারিত পরকালবিদ্যার সূচনা করেছিল, যেখানে জীবনে করা পছন্দের চিরস্থায়ী পরিণতি রয়েছে এবং যা এক চূড়ান্ত মহাজাগতিক সংস্কারের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। মৃত্যুর পর, ব্যক্তির চিন্তা, বাক্য এবং কর্মের ভিত্তিতে আত্মার বিচার হয় 6। আত্মাকে চিনভাত সেতু (বিচার সেতু) পার হতে হয়। ধার্মিকদের জন্য এই সেতু প্রশস্ত ও সহজ হয় এবং স্বর্গের (গানের ঘর) দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু পাপীদের জন্য এটি ক্ষুরের ধারের মতো সরু হয়ে যায় এবং তারা নরকে (মিথ্যার ঘর) পতিত হয় 6।
ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, সময়ের শেষে এক শেষ বিচার (Frashokereti) হবে 11। সাউশিয়ান্ট (Saoshyant) নামক এক ত্রাণকর্তা আবির্ভূত হবেন। আংরা মাইনইউ এবং তার অনুসারী দানবরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও ধ্বংস হবে 9। জগৎ পুনর্নবীকৃত ও নিখুঁত হবে এবং সমস্ত মানবজাতি এক পরিপূর্ণ জগতে চিরন্তন আনন্দ লাভ করবে 9।
পবিত্র গ্রন্থ এবং নৈতিকতার দিশা
আবেস্তা: পবিত্র ধর্মগ্রন্থ
আবেস্তা হলো জরথুস্ত্রীয় পবিত্র গ্রন্থগুলির সংকলন, যা কোনো একক আখ্যানমূলক গ্রন্থ নয়, বরং অনেকটা প্রার্থনা পুস্তকের মতো 9। এর প্রাচীনতম অংশগুলি আবেস্তান নামক এক প্রাচীন ইরানি ভাষায় রচিত 10। এই গ্রন্থগুলি সম্ভবত সাসানীয় যুগে লিখিত রূপ পাওয়ার আগে বহু শতাব্দী ধরে মৌখিকভাবে প্রচলিত ছিল 23।
গাথা: পয়গম্বরের নিজস্ব কণ্ঠ
গাথা হলো আবেস্তার কেন্দ্রবিন্দু এবং জরথুস্ত্রের শিক্ষার সবচেয়ে খাঁটি প্রকাশ। এগুলি ১৭টি স্তোত্র, যা স্বয়ং জরথুস্ত্র কর্তৃক রচিত বলে বিশ্বাস করা হয় 10। এগুলি আবেস্তার প্রাচীনতম অংশ, এবং এর ভাষা (গাথিক বা প্রাচীন আবেস্তান) ভারতের ঋগ্বেদের মতোই প্রাচীন (আনুমানিক ১৫০০-১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) 13। এই স্তোত্রগুলি কোনো কঠোর ধর্মীয় বিধানের পরিবর্তে মূলত আহুরা মাজদার স্তুতি ও মহিমা কীর্তনের জন্য রচিত হয়েছিল 21।
গাথাগুলির অনুবাদ অত্যন্ত কঠিন। এর ভাষা প্রাচীন, চিন্তাভাবনা বিমূর্ত এবং শৈলী জটিল 21। সাসানীয় যুগের অনুবাদ (জেন্দ) থাকলেও সেগুলি প্রায়শই অনুমানভিত্তিক, কারণ ততদিনে আবেস্তান ভাষা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল 22। তাই আধুনিক পণ্ডিতদের জন্য এর সঠিক ব্যাখ্যা করা এক বড় চ্যালেঞ্জ।
"হুমাটা, হুখতা, হুভার্শতা": ত্রিবিধ পথ
এই ধর্মের ব্যবহারিক এবং নৈতিক সারমর্মটি একটি সরল নীতির মধ্যে নিহিত: হুমাটা, হুখতা, হুভার্শতা (Humata,Hukhta,Huvarshta), যার অর্থ "শুভ চিন্তা, শুভ বাক্য, শুভ কর্ম" 16। এই ত্রিবিধ পথটি বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু এবং এটি দেখায় কীভাবে একজন ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে মন্দের বিরুদ্ধে মহাজাগতিক সংগ্রামে অংশ নেয় এবং আশাকে সমুন্নত রাখে 3।
এই নীতির ক্রম—প্রথমে চিন্তা, তারপর বাক্য এবং শেষে কর্ম—কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। এটি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক এবং দার্শনিক উপলব্ধিকে প্রতিফলিত করে যে, মানুষের অভ্যন্তরীণ চিন্তার জগৎই হলো প্রাথমিক যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে ভালো এবং মন্দের মধ্যে পছন্দ নির্ধারিত হয়। গাথার পৌরাণিক কাহিনীতে আংরা মাইনইউ-এর পতন "অশুভ চিন্তা" (AkaManah) থেকে উদ্ভূত হয়েছিল 7। একইভাবে, প্রথম মানব দম্পতিও প্রতারিত হওয়ার পরেই পাপ করেছিল, যা এক দূষিত চিন্তা-প্রক্রিয়ার ফল 15। সুতরাং, জরথুস্ত্রীয় নীতিশাস্ত্র অত্যন্ত আত্মদর্শনমূলক 28। এটি কেবল আচরণের একটি তালিকা নয়, বরং এটি একটি জ্ঞানীয় শৃঙ্খলা। মঙ্গলের জন্য সংগ্রাম ব্যক্তির মনের নীরব, অভ্যন্তরীণ জগতে শুরু হয়, যা মহাজাগতিক যুদ্ধের একেবারে সম্মুখভাগ।
● শুভ চিন্তা (হুমাটা/পেন্দার): এটিই ভিত্তি। চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ইতিবাচক রাখতে হবে, কারণ চিন্তা থেকেই বাক্য ও কর্মের জন্ম হয় 29।
● শুভ বাক্য (হুখতা): এটি সত্যবাদী এবং সদয় কথাবার্তার উপর জোর দেয়। মিথ্যা, পরচর্চা এবং কঠোর মন্তব্য এড়িয়ে চলতে হবে 28।
● শুভ কর্ম (হুভার্শতা): এর মধ্যে রয়েছে পরোপকারী কাজ, দাতব্য, অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন, পরিবেশ রক্ষা এবং সমস্ত বিষয়ে সংযম অনুশীলন করা 3।
উপাসনা, আচার এবং পবিত্র উপাদানসমূহ
অগ্নি উপাসনা: দিব্যতার প্রতীক
জরথুস্ত্রীয় উপাসনায় আগুনের (Atar) কেন্দ্রীয় ভূমিকা প্রায়শই ভুলভাবে "অগ্নি-পূজা" হিসেবে আখ্যায়িত হয়। প্রকৃতপক্ষে, জরথুস্ত্রীয়রা আগুনকে পূজা করে না; তারা আগুনের মাধ্যমে উপাসনা করে। আগুন আহুরা মাজদার দিব্য উপস্থিতি, আলো, উষ্ণতা এবং বিশুদ্ধতার প্রতীক 30। আগুন এবং জল (Aban) উভয়ই ধর্মীয় বিশুদ্ধতার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয় 32। এই প্রথা সম্ভবত গৃহস্থালির উনুনের আগুন থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা পরিবারের প্রধানের জীবনকাল ধরে জ্বালিয়ে রাখা হতো এবং গৃহে ঈশ্বরের উপস্থিতির প্রতীক ছিল 30।
অগ্নি মন্দির (আগিয়ারি/আতশগাহ)
অগ্নি মন্দির, যা ফার্সিতে আতশগাহ ("আগুনের ঘর") এবং গুজরাটিতে আগিয়ারি নামে পরিচিত, পবিত্র আগুন রক্ষার জন্য নির্মিত একটি উপাসনালয় 32। প্রাথমিক উপাসনা খোলা আকাশের নিচে ঢিবির উপর করা হতো 32। আবদ্ধ মন্দির সম্ভবত হাখমানেশী যুগে আবির্ভূত হয় এবং পার্থিয়ান ও সাসানীয় যুগে আরও প্রচলিত হয় 30। মন্দিরের পবিত্র আগুনকে বাতাসের ঝাপটা থেকে রক্ষা করতে হয় এবং পুরোহিতরা আগুন পরিচর্যার সময় মুখে একটি আবরণ (padan) পরেন, যাতে তাদের নিঃশ্বাস আগুনকে দূষিত না করে 32।
পবিত্র আগুনের তিনটি স্তর রয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান জটিল আচার-অনুষ্ঠানের দ্বারা আলাদা:
1. আতশ দাদগাহ: সর্বনিম্ন স্তরের আগুন, যা ছোট উপাসনালয় বা বাড়িতে রাখা হয়।
2. আতশ আদারান ("আগুনের আগুন"): একটি এলাকার সাধারণ আগুন, যা চারটি পেশাজীবী গোষ্ঠীর বাড়ি থেকে সংগৃহীত আগুন দিয়ে তৈরি হয়।
3. আতশ বেহরাম ("বিজয়ী আগুন"): সর্বোচ্চ স্তরের আগুন, যার প্রতিষ্ঠার জন্য এক বছরব্যাপী আচার-অনুষ্ঠান প্রয়োজন হয়। এটি বজ্রপাতসহ ১৬টি ভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত আগুন দিয়ে তৈরি হয় এবং এই আগুন অবিরাম জ্বালিয়ে রাখা হয় 32।
বিশুদ্ধতা, দূষণ এবং নৈঃশব্দের মিনার
সৃষ্টির পবিত্র উপাদানগুলিকে (মাটি, জল, আগুন, বায়ু) দূষণ থেকে রক্ষা করার ধর্মতাত্ত্বিক अनिवार্যতা কিছু অনন্য এবং প্রায়শই ভুলভাবে বোঝা আচারের জন্ম দিয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মৃতদেহ সৎকারের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। জরথুস্ত্রবাদে মৃত বস্তুর (nasu) সংস্পর্শ এড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়, কারণ এটিকে আংরা মাইনইউ-এর ক্ষেত্র বলে মনে করা হয় 9। যেহেতু সমাধি দিলে পবিত্র মাটি এবং দাহ করলে পবিত্র আগুন দূষিত হবে, তাই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ছিল মৃতদেহগুলিকে দাখমা বা "নৈঃশব্দের মিনার" নামক উঁচু, বৃত্তাকার কাঠামোতে রাখা 1।
সেখানে মৃতদেহটি প্রকৃতির উপাদান এবং শিকারি পাখিদের কাছে উন্মুক্ত রাখা হতো। পরে রৌদ্রে শুকিয়ে যাওয়া হাড়গুলি সংগ্রহ করে একটি কেন্দ্রীয় কুয়ায় রাখা হতো 6। এই প্রথা নিশ্চিত করত যে ক্ষয়িষ্ণু দেহ দ্বারা কোনো পবিত্র উপাদান দূষিত হবে না। এই আচারগুলি কোনো খেয়ালি ঐতিহ্য নয়, বরং বিশুদ্ধতা বনাম দূষণ এবং আহুরা মাজদার সৃষ্টির পবিত্রতার মূল ধর্মতত্ত্বের যৌক্তিক এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ। পুরোহিতের মুখ ঢাকার কাজটি কেবল একটি প্রথা নয়; এটি ক্ষুদ্র স্তরে দ্রুজের বিরুদ্ধে আশার এক জীবন্ত প্রতিরক্ষা।
উদযাপনের সম্ভার: প্রধান জরথুস্ত্রীয় উৎসবসমূহ
জরথুস্ত্রীয় উৎসবগুলি ঋতু, কৃষিচক্র এবং সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায় উদযাপনের সাথে গভীরভাবে জড়িত, যা ঈশ্বরের সৃষ্টি হিসেবে প্রাকৃতিক বিশ্বের সাথে সম্প্রদায়ের সংযোগকে শক্তিশালী করে।
উৎসবের নাম |
সময়/তারিখ |
ধর্মতাত্ত্বিক তাৎপর্য (কাকে সম্মান জানানো হয়) |
মূল উদযাপন |
নওরোজ |
বসন্ত বিষুব (২১ মার্চ) |
নববর্ষ, পুনর্নবীকরণ, অন্ধকারের উপর আলোর বিজয় |
হাফত-সিন টেবিল সাজানো, মন্দিরে যাওয়া 35 |
গাহাম্বার (ছয়টি) |
ঋতুভিত্তিক (যেমন, মধ্য-বসন্ত) |
সৃষ্টির ছয়টি পর্যায় (আকাশ, জল, পৃথিবী, উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ) |
সাম্প্রদায়িক প্রার্থনা ও ভোজ 37 |
মেহেরগান |
শরৎকাল |
মিথ্র (চুক্তি, আলো, বন্ধুত্ব) |
ডালিম ও মিষ্টি সহযোগে ভোজ 36 |
সাদেহ |
মধ্য-শীত |
অন্ধকারের উপর আগুনের বিজয় |
বিশাল অগ্নিকুণ্ড জ্বালানো 36 |
ফ্রাওয়ার্দিগান/মুক্তাদ |
বছরের শেষে (১০ দিন) |
মৃতদের আত্মা (fravashi) স্মরণ |
ঘরে প্রার্থনা, উৎসর্গ 35 |
খোরদাদ সাল |
প্রথম মাসের ৬ষ্ঠ দিন |
জরথুস্ত্রের জন্মদিন |
স্তোত্র পাঠ, উদযাপন 35 |
জরথোস্ত নো-দিসো |
দশম মাসের ১১তম দিন |
জরথুস্ত্রের মৃত্যুবার্ষিকী |
গম্ভীর প্রার্থনা, আত্মচিন্তা 35 |
এক সাম্রাজ্যের ধর্ম: পারস্য সাম্রাজ্যগুলিতে জরথুস্ত্রবাদ
জরথুস্ত্রবাদের ভূমিকা তিনটি স্বতন্ত্র সাম্রাজ্যের যুগে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, যা রাজকীয় মতাদর্শ থেকে একটি সমন্বিত বিশ্বাস এবং অবশেষে একটি কঠোর রাষ্ট্রীয় ধর্মে রূপান্তরিত হয়। এই বিবর্তন ধর্ম ও সাম্রাজ্যের ক্ষমতার মধ্যে গতিশীল সম্পর্ককে তুলে ধরে।
হাখমানেশী যুগ (আনুমানিক ৫৫০–৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): সাম্রাজ্যের মতাদর্শ
আধুনিক অর্থে একটি চাপিয়ে দেওয়া "রাষ্ট্রধর্ম" না হলেও, জরথুস্ত্রবাদ হাখমানেশী সাম্রাজ্যের মতাদর্শগত মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছিল। এটি রাজকীয় ক্ষমতাকে বৈধতা দিত এবং একই সাথে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতির সাথে সহাবস্থান করত। মহান কুরুশ, দারিয়ুস এবং খাশায়ারশার মতো রাজারা সম্ভবত এই ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন 14। দারিয়ুসের বেহিস্তুন শিলালিপির মতো রাজকীয় শিলালিপিতে প্রায়শই আহুরা মাজদাকে সেই মহান দেবতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং রাজাকে শাসনের অধিকার দিয়েছেন 14। তবে, সাম্রাজ্যটি অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিল, যার প্রধান উদাহরণ হলো ব্যাবিলন থেকে ইহুদিদের মুক্তি দেওয়া 14।
পার্থিয়ান যুগ (২৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ–২২৪ খ্রিস্টাব্দ): সমন্বয়বাদ এবং বিতর্কের যুগ
পার্থিয়ান যুগ জরথুস্ত্রবাদের জন্য একটি জটিল এবং বিতর্কিত সময় ছিল, যা ধর্মীয় সহনশীলতা, হেলেনিস্টিক বিশ্বাসের সাথে সমন্বয়বাদ এবং জরথুস্ত্রীয় অনুশীলনের পাশাপাশি ইয়াজাতা মিথ্রার সম্ভাব্য উত্থান দ্বারা চিহ্নিত। পার্থিয়ানরা ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করত এবং তাদের সংস্কৃতি ছিল গ্রিক ও ইরানি উপাদানের মিশ্রণ 31। জরথুস্ত্রবাদের ধারাবাহিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়: পার্থিয়ান রাজারা আবেস্তা থেকে নাম গ্রহণ করতেন, জরথুস্ত্রীয় মাস ব্যবহার করতেন এবং অগ্নিবেদীসহ মুদ্রা তৈরি করতেন 31। তবে, তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু সূত্র মতে, পার্থিয়ানদের মধ্যে মিথ্র পূজা বেশি প্রচলিত ছিল 31। মৃতদেহ দাহ বা সমাধিস্থ করার মতো পার্থিয়ান প্রথাগুলি আবেস্তার বিধান দ্বারা নিন্দিত হয়েছিল, যা গোঁড়া জরথুস্ত্রীয় বিশুদ্ধতার নিয়ম থেকে একটি বিচ্যুতি নির্দেশ করে 31।
সাসানীয় যুগ (২২৪–৬৫১ খ্রিস্টাব্দ): গোঁড়ামি এবং রাষ্ট্রীয় গির্জা
সাসানীয়রা জরথুস্ত্রবাদকে একটি রাজদরবারের ধর্ম থেকে একটি অত্যন্ত
সংগঠিত, শ্রেণিবদ্ধ এবং গোঁড়া রাষ্ট্রীয় ধর্মে রূপান্তরিত করে। তারা এটিকে সাম্রাজ্যের
ঐক্য ও পরিচয়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। প্রথম আর্দাশির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
এই রাজবংশ জরথুস্ত্রবাদকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে 42। তানসার এবং কার্তেরের মতো
উচ্চপদস্থ পুরোহিতরা এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তানসার পবিত্র
গ্রন্থগুলি সংগ্রহ ও আবেস্তার অনুশাসন নির্ধারণের দায়িত্ব নেন 24। কার্তের পুরোহিততন্ত্রের
ক্ষমতা সুসংহত করেন এবং ইহুদি, খ্রিস্টান ও মানিকিয়ানদের মতো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের
উপর নিপীড়ন চালান 24। এই সময়ে রাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে ধর্মীয় ভিন্নমত দমন করে, যেমন মাজদাকের
সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলনকে হিংস্রভাবে দমন করা হয়েছিল 24।
সাম্রাজ্য |
সরকারী মর্যাদা |
মূল নীতি |
প্রধান প্রমাণ |
মূল ব্যক্তিত্ব/উন্নয়ন |
হাখমানেশী |
প্রভাবশালী রাজকীয় মতাদর্শ |
ধর্মীয় সহনশীলতা |
বেহিস্তুন শিলালিপি, কুরুশের সিলিন্ডার |
কুরুশ, দারিয়ুস প্রথম |
পার্থিয়ান |
বিতর্কিত; অন্যতম প্রধান ধর্ম |
সমন্বয়বাদ ও সহনশীলতা |
অগ্নিবেদীসহ মুদ্রা, অস্ট্রেকাতে আবেস্তান নাম |
মিথ্র পূজার উত্থান |
সাসানীয় |
সরকারী, গোঁড়া রাষ্ট্রীয় ধর্ম |
গোঁড়ামির প্রয়োগ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিপীড়ন |
কার্তেরের শিলালিপি, আবেস্তার অনুশাসন নির্ধারণ |
আর্দাশির প্রথম, তানসার, কার্তের, মাজদাক |
পতন এবং প্রবাস: বিজয়-পরবর্তী যুগ এবং পার্সি পরিচয়ের জন্ম
আরব বিজয় এবং পারস্যে পতন
৭ম শতাব্দীতে পারস্যে মুসলিম বিজয় জরথুস্ত্রবাদের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অবসানের সূচনা করে এবং এক দীর্ঘ, ধীর পতনের দিকে নিয়ে যায়, যা নিপীড়ন, সামাজিক চাপ এবং ধর্মান্তর দ্বারা চিহ্নিত। সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর, প্রথমদিকে জরথুস্ত্রীয়দের জিজিয়া করের বিনিময়ে "ধিম্মি" (সুরক্ষিত প্রজা) হিসেবে ধর্ম পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল 8। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিপীড়ন বাড়তে থাকে। উমাইয়া এবং আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনে তাদের উপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যেমন সরকারী পদে নিষেধাজ্ঞা, নতুন মন্দির নির্মাণে বাধা এবং বিশেষ পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা 8। অগ্নি মন্দিরগুলি ধ্বংস বা মসজিদে রূপান্তরিত করা হয় 8। এই চাপ এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রণোদনার কারণে বহু লোক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় 6।
ভারতে পলায়ন এবং পার্সিদের উৎপত্তি
মাতৃভূমিতে নিপীড়নের সম্মুখীন হয়ে একদল জরথুস্ত্রীয় ভারতে পালিয়ে আসে এবং সেখানে একটি নতুন সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে যা এই ধর্মকে রক্ষা করে এবং একটি অনন্য পরিচয় গড়ে তোলে। তারা ভারতের পশ্চিম উপকূলে (গুজরাট) আশ্রয় নেয় 1। এই শরণার্থীরা পার্সি (অর্থাৎ "পারস্যবাসী") নামে পরিচিত হয় 44। স্থানীয় হিন্দু শাসক জাদি রানা তাদের এই শর্তে আশ্রয় দেন যে তারা স্থানীয় ভাষা (গুজরাটি) ও বিবাহের প্রথা গ্রহণ করবে এবং অস্ত্র বহন করবে না 44।
পার্সি সম্প্রদায়: সংহতি এবং সমৃদ্ধি
পার্সিরা ভারতীয় সমাজে সফলভাবে নিজেদের সংহত করে এবং একই সাথে তাদের
স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় বজায় রাখে। তারা বাণিজ্য, শিল্প এবং পরোপকারে অসাধারণ
সাফল্য অর্জন করে। ১৭শ শতকে ব্রিটিশদের আগমনের পর তাদের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়,
কারণ তারা ইউরোপীয় প্রভাব গ্রহণে অন্যদের চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল এবং বাণিজ্যে দক্ষতা
প্রদর্শন করে 45। তারা একটি ধনী ও অত্যন্ত সফল সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ধর্মটি সম্পদ অর্জনে উৎসাহিত করত, তবে শর্ত ছিল যে তা অন্যদের সাহায্যে ব্যবহার করতে
হবে 1। জামশেদজি টাটা (টাটা গোষ্ঠীর
প্রতিষ্ঠাতা) এবং লাভজি ওয়াদিয়ার (ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা) মতো বিখ্যাত পার্সি
শিল্পপতিরা এর উজ্জ্বল উদাহরণ। আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত পার্সি ছিলেন কুইন ব্যান্ডের
ফ্রেডি মার্কারি (জন্ম নাম ফারুখ বুলসারা) 1।
বিজয়-পরবর্তী যুগ ধর্মের টিকে থাকার জন্য দুটি ভিন্ন পথ তৈরি করেছিল। ইরানে যারা থেকে গিয়েছিল, তারা ভৌগোলিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে টিকে ছিল, যা তাদের মাতৃভূমির সাথে সংযোগ রক্ষা করলেও ক্রমাগত নিপীড়ন এবং জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়েছিল। অন্যদিকে, ভারতে পার্সিরা সাংস্কৃতিক অভিযোজন এবং একীকরণের মাধ্যমে টিকে ছিল, যা তাদের অসাধারণ সমৃদ্ধি এনে দেয় কিন্তু বহু শতাব্দী ধরে তাদের মূল উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি নতুন প্রবাসী পরিচয় তৈরি করে।
আধুনিক জরথুস্ত্রবাদ: সম্প্রদায়, চ্যালেঞ্জ এবং পরিচয়
জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বাস্তবতা: এক ক্ষয়িষ্ণু ধর্ম
আধুনিক জরথুস্ত্রবাদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যা হলো এর দ্রুত হ্রাসমান জনসংখ্যা, যা এর দীর্ঘমেয়াদী অস্তিত্বের জন্য একটি হুমকি। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ১,০০,০০০ থেকে ১,২২,০০০-এর মধ্যে অনুমান করা হয় 7। বৃহত্তম সম্প্রদায় ভারতে (পার্সি), যার সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০-৬০,০০০, কিন্তু এই সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে 7। দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় ইরানে, যেখানে আনুমানিক ১৫,০০০-২৫,০০০ অনুসারী রয়েছে 7। উত্তর আমেরিকা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের কারণে প্রবাসী সম্প্রদায়গুলি বাড়ছে 1। এই হ্রাসের কারণ হিসেবে কম জন্মহার, নিঃসন্তান থাকা, অভিবাসন এবং কঠোর সগোত্রবিবাহ (ধর্মের বাইরে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা) এবং ধর্মান্তরে বিধিনিষেধকে দায়ী করা হয় 7।
সমসাময়িক সম্প্রদায়: ইরান, ভারত এবং প্রবাসী
আজকের দিনে একজন জরথুস্ত্রীয় হওয়ার অভিজ্ঞতা স্থানভেদে ভিন্ন। ইরানে
তারা আইনত স্বীকৃত কিন্তু সীমাবদ্ধ সংখ্যালঘু। ভারতে তারা এক সমৃদ্ধশালী কিন্তু ক্রমহ্রাসমান
সম্প্রদায় এবং পশ্চিমে তারা নতুন ও বিকশিত সম্প্রদায় গঠন করেছে। ইরানে, তারা সরকারীভাবে
স্বীকৃত সংখ্যালঘু এবং সংসদে তাদের জন্য একটি আসন সংরক্ষিত আছে, কিন্তু তারা উচ্চ সরকারী
পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে না এবং তাদের ধর্মীয় শিক্ষা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়
8। ভারতে পার্সিরা একটি সুসংজ্ঞায়িত,
উচ্চ শিক্ষিত এবং ঐতিহাসিকভাবে ধনী সম্প্রদায়, যারা মূলত মুম্বাইয়ে কেন্দ্রীভূত 44।
আধুনিক জরথুস্ত্রবাদের মূল চ্যালেঞ্জটি একটি গভীর আদর্শগত দ্বন্দ্বের মধ্যে নিহিত: বিশুদ্ধতা (জাতিগত বংশ এবং সগোত্রবিবাহের মাধ্যমে রক্ষিত) বনাম অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অভিযোজনের (ধর্মান্তর এবং ভিন্ন ধর্মে বিবাহের মাধ্যমে) প্রয়োজনীয়তা। ঐতিহ্যগতভাবে, বিশুদ্ধতার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা পার্সি পরিচয়কে একটি স্বতন্ত্র জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে গঠন করেছে। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে এই ঐতিহ্যবাহী মডেলটি জনসংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে টেকসই নয়। ধর্মের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই মৌলিক উত্তেজনার সমাধানের উপর: তারা কি বিশুদ্ধতার মূল্যে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পতন মেনে নেবে, নাকি তারা তাদের পরিচয়কে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে, ধর্মান্তর এবং মিশ্র বিবাহের সন্তানদের গ্রহণ করে টিকে থাকার জন্য অভিযোজিত হবে? এই অভ্যন্তরীণ বিতর্কই একবিংশ শতাব্দীর জরথুস্ত্রবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যান।
প্রাচীন ধর্মের প্রতীক: ফারাভাহার এবং তার অর্থ
ফারাভাহার (Faravahar), এই ধর্মের সাথে যুক্ত সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতীক,
ইরানি এবং জরথুস্ত্রীয় পরিচয়ের একটি শক্তিশালী প্রতীক। তবে এর আসল অর্থ হারিয়ে গেছে
এবং এর আধুনিক ব্যাখ্যাগুলি বৈচিত্র্যময় ও বিতর্কিত। এটি একটি ডানাওয়ালা সূর্যচক্র
যার কেন্দ্রে একজন পুরুষের প্রতিকৃতি রয়েছে 47। এটি প্রথম হাখমানেশী সাম্রাজ্যের সময় পারস্যের শিল্পকর্মে আবির্ভূত
হয় 47।
এই প্রতীকের উৎপত্তি পারস্যে নয়। ডানাওয়ালা সূর্যচক্র মিশর (হোরাস
এবং রাজতন্ত্রের প্রতীক) এবং মেসোপটেমিয়া (সূর্যদেব শামাশের প্রতীক) থেকে আসা একটি
প্রাচীন প্রতীক 47। কেন্দ্রে মানবমূর্তিসহ নির্দিষ্ট পারস্য নকশাটি সম্ভবত আসিরীয় দেবতা
আশুরের প্রতীক থেকে অভিযোজিত হয়েছে 47। হাখমানেশী যুগের পর এই প্রতীকটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায় এবং ২০শ
শতকে পার্সি পণ্ডিত জামশেদজি মানেকজি উনভালার কাজের মাধ্যমে এটি পুনরুজ্জীবিত হয় এবং
ইরানের পাহলভি রাজবংশ দ্বারা একটি জাতীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয় 47।
এর আধুনিক ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে রয়েছে:
●
এটি আহুরা মাজদাকে প্রতিনিধিত্ব
করে (একটি সাধারণ কিন্তু বিতর্কিত মত) 47।
●
এটি ফ্রাভাশি (Fravashi),
ব্যক্তির উচ্চতর আত্মা বা অভিভাবক দেবদূতকে প্রতিনিধিত্ব করে 47।
●
এটি খভারেনাহ (Khvarenah)
বা ঐশ্বরিক গৌরবকে প্রতিনিধিত্ব করে যা রাজাদের প্রদান করা হতো 47।
●
এটি ত্রিবিধ পথের একটি চাক্ষুষ
উপস্থাপনা: ডানাগুলি "শুভ চিন্তা, শুভ বাক্য, শুভ কর্ম"-এর প্রতীক 47।
ফারাভাহার একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ যে কীভাবে একটি প্রতীক আধুনিক পরিচয়ের চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থ লাভ করতে পারে। এর আজকের শক্তি তার অজানা প্রাচীন অর্থের চেয়ে অনেক বেশি আসে যা এটি প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করেছে: জরথুস্ত্রীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ ইরানি উভয়ের জন্য এক গৌরবময়, প্রাক-ইসলামিক পারস্য অতীতের একটি বাস্তব সংযোগ।
এক চিরস্থায়ী উত্তরাধিকার: বিশ্ব ধর্মে জরথুস্ত্রীয় প্রভাব
জরথুস্ত্রীয় ধর্মতাত্ত্বিক ধারণাগুলি নির্বাসন-পরবর্তী ইহুদি ধর্ম
এবং পরবর্তীকালে খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামের বিকাশে গভীর এবং সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাব ফেলেছিল।
এই প্রভাবের প্রধান মাধ্যম ছিল ব্যাবিলনীয় নির্বাসন (৫৮৬-৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। যখন
মহান কুরুশের অধীনে হাখমানেশী পারস্য ব্যাবিলন জয় করে, তখন ইহুদিরা পারস্য (জরথুস্ত্রীয়)
সংস্কৃতি ও চিন্তাধারার সাথে সরাসরি এবং দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শে আসে 6।
জরথুস্ত্রবাদ কেবল আব্রাহামীয় ধর্মগুলিকে "প্রভাবিত" করেনি;
এটি পরকালবিদ্যার মৌলিক নীলনকশা প্রদান করেছে—ইতিহাসের একটি শুরু, মধ্য (সংগ্রাম) এবং
একটি নির্দিষ্ট সমাপ্তি (শেষ বিচার এবং পরিত্রাণ/শাস্তি)—যা ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলামের
বিশ্বদৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই ধারণাগুলি হলো:
1.
পরকালবিদ্যা (স্বর্গ, নরক, বিচার): এটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব। নির্বাসন-পূর্ব ইহুদি ধর্মে শিয়োল
(Sheol) নামক একটি অস্পষ্ট পরকালের ধারণা ছিল 51। নির্বাসন-পরবর্তী ইহুদি চিন্তাধারায়, বিশেষ করে অপ্রামাণিক সাহিত্যে,
ধার্মিকদের জন্য স্বর্গ এবং পাপীদের জন্য নরক, একটি শেষ বিচার এবং মৃতের পুনরুত্থানের
ধারণাগুলি বিকশিত হয়—এগুলি সবই জরথুস্ত্রবাদের মূল ভিত্তি 5। "প্যারাডাইস"
শব্দটি নিজেই একটি ফার্সি শব্দ (
pairi−daeza) থেকে উদ্ভূত 6।
2.
দ্বৈতবাদ এবং শয়তান: একজন মঙ্গলময় ঈশ্বর এবং
এক শক্তিশালী অশুভ প্রতিপক্ষের (আংরা মাইনইউ/আহরিমান) মধ্যে মহাজাগতিক সংগ্রামের জরথুস্ত্রীয়
ধারণাটি ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মে শয়তানের ধারণার বিকাশে প্রভাব ফেলেছিল। শয়তান ঈশ্বরের
দরবারে একজন সামান্য "অভিযোগকারী" থেকে আহরিমানের মতো এক শক্তিশালী, স্বাধীন
অশুভ উৎসে রূপান্তরিত হয় 6।
3.
দেবদূত ও দানববিদ্যা: পারস্যের সংস্পর্শে আসার
পর, ইহুদি দেবদূতেরা নাম (যেমন, মাইকেল, গ্যাব্রিয়েল) এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব লাভ
করে, যা জরথুস্ত্রীয় ইয়াজাতাদের (yazata) অনুকরণ করে। সাতজন প্রধান দেবদূতের ধারণাটি
সম্ভবত সাতজন আমেশা স্পেন্টা থেকে অনুপ্রাণিত 34।
4. ত্রাণকর্তার ধারণা: ভবিষ্যতের ত্রাণকর্তা, সাউশিয়ান্টের জরথুস্ত্রীয় ধারণাটি, যিনি সময়ের শেষে আবির্ভূত হবেন, ইহুদিদের মসিহ বা ত্রাণকর্তার ধারণাকে প্রভাবিত করেছিল এবং এটিকে একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে একটি পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করেছিল 50। ম্যাথিউর গসপেলে ম্যাজাইদের গল্পটি এই জরথুস্ত্রীয় প্রত্যাশার সাথে সরাসরি জড়িত 50।
উপসংহার: প্রাচীন শিখার विरोधाभाস
এই প্রতিবেদনে জরথুষ্ট্রবাদের একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যার কেন্দ্রীয় দ্বন্দ্বগুলি তুলে ধরা হয়েছে। জরথুষ্ট্র ছিলেন একজন ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লবী যিনি নৈতিক একেশ্বরবাদ এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে মহাজাগতিক সংগ্রামের চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ধর্মের বিবর্তন ধর্ম এবং ক্ষমতার গতিশীল মিথস্ক্রিয়াকে তুলে ধরে, যা রাজকীয় মতাদর্শ (আখামেনিড) থেকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম (সাসানীয়) রূপান্তরের মাধ্যমে।
ইসলামী বিজয় দুটি ভিন্ন ধারার জন্ম দিয়েছে: ইরানে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকা এবং ভারতে অভিযোজনের মাধ্যমে সমৃদ্ধি। আধুনিক জরথুষ্ট্রবাদ আজ পবিত্রতা রক্ষা এবং অস্তিত্ব রক্ষার মধ্যে একটি গভীর দ্বন্দ্বে নিমজ্জিত, যা এর ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
জরথুষ্ট্রবাদের চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব হল: বিশ্ব ধর্মগুলিতে এর উত্তরাধিকার বিশাল এবং ভিত্তিগত, তবুও এর শিখা আজ ছোট এবং ভঙ্গুর। এর গল্পটি একটি শক্তিশালী প্রমাণ যে ধারণাগুলি কীভাবে বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে, এমনকি যখন সেই ধারণাগুলির প্রবর্তকরা নিজেরাই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে।
Works
cited
1.
Ancient
but small in number, Zoroastrians confront depletion of their faith | PBS News,
accessed on July 9, 2025, https://www.pbs.org/newshour/arts/ancient-but-small-in-number-zoroastrians-confront-depletion-of-their-faith
2.
Zoroastrianism
| Definition, Beliefs, Founder, Holy Book, & Facts | Britannica, accessed
on July 9, 2025, https://www.britannica.com/topic/Zoroastrianism
3.
Zarathustra
- World History Encyclopedia, accessed on July 9, 2025, https://www.worldhistory.org/zoroaster/
4.
Ancient
Persia - World History Encyclopedia, accessed on July 9, 2025, https://www.worldhistory.org/Persia/
5.
people.howstuffworks.com,
accessed on July 9, 2025, https://people.howstuffworks.com/zoroastrianism.htm#:~:text=Zoroastrianism%20is%20the%20world's%20oldest,and%20emphasizes%20actions%20over%20beliefs.
6.
Before
Christianity, Judaism and Islam, There Was Zoroastrianism - People |
HowStuffWorks, accessed on July 9, 2025, https://people.howstuffworks.com/zoroastrianism.htm
7.
Zoroastrianism
- Wikipedia, accessed on July 9, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Zoroastrianism
8.
How
Have Zoroastrians Been Treated in Muslim Iran? - Britannica, accessed on July
9, 2025, https://www.britannica.com/story/how-have-zoroastrians-been-treated-in-muslim-iran
9.
Angra
Mainyu | Definition & Facts | Britannica, accessed on July 9, 2025, https://www.britannica.com/topic/Ahriman
10. Zoroaster - Wikipedia, accessed on July 9,
2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Zoroaster
11. Zarathustra - Livius, accessed on July 9,
2025, https://www.livius.org/articles/person/zarathustra/
12. Zoroastrianism in the Sasanian Empire -
ArcGIS StoryMaps, accessed on July 9, 2025, https://storymaps.arcgis.com/stories/07f90851fcd44212a206d4c6574394fa
13. Avesta - Livius, accessed on July 9, 2025, https://www.livius.org/sources/content/avesta/
14. Zoroastrianism And Persian Mythology: The
Foundation Of Belief ..., accessed on July 9, 2025, https://www.thecollector.com/zoroastrianism-persian-mythology/
15. Ahura Mazda (deity) | EBSCO Research
Starters, accessed on July 9, 2025, https://www.ebsco.com/research-starters/history/ahura-mazda-deity
16. “Good Thoughts, Good Words, Good Deeds” Has
Been the Constant Motto of Bakhtavar & Fred Desai Throughout Their Life and
One of the Essential Teachings of Their Zoroastrian Faith - sos art cincinnati,
accessed on July 9, 2025, https://sosartcincinnati.com/2018/09/21/good-thoughts-good-words-good-deeds-has-been-the-constant-motto-of-bakhtavar-fred-desai-throughout-their-life-and-one-of-the-essential-teachings-of-their-zoroastrian-faith/
17. www.theosophical.org, accessed on July 9,
2025, https://www.theosophical.org/publications/quest-magazine/zoroastrianism-history-beliefs-and-practices#:~:text=Zoroastrianism%20views%20the%20world%20as,exactly%20what%20they%20should%20be.
18. Basic Beliefs - RE:ONLINE, accessed on July
9, 2025, https://www.reonline.org.uk/knowledge/zoroastrianism/basic-beliefs/
19. www.pbs.org, accessed on July 9, 2025, https://www.pbs.org/newshour/arts/ancient-but-small-in-number-zoroastrians-confront-depletion-of-their-faith#:~:text=Beliefs,words%20and%20do%20good%20deeds.
20. Ahura Mazda/Angra Mainyu, accessed on July
9, 2025, https://www.cs.cmu.edu/~ram/art/sculpture/ahuramazda/
21. The Gathas ("Hymns") of
Zarathushtra - AVESTA -- Zoroastrian Archives, accessed on July 9, 2025, https://www.avesta.org/gathas.htm
22. Gatha (Zoroaster) - Wikipedia, accessed on
July 9, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Gatha_(Zoroaster)
23. How Zoroastrian was the Achaemenid Empire?
: r/AskHistorians - Reddit, accessed on July 9, 2025, https://www.reddit.com/r/AskHistorians/comments/7wadjb/how_zoroastrian_was_the_achaemenid_empire/
24. Zoroastrianism - Sasanian, Dualism, Ahura
Mazda | Britannica, accessed on July 9, 2025, https://www.britannica.com/topic/Zoroastrianism/The-Sasanian-period
25. Zoroastrianism - NHS Organ Donation,
accessed on July 9, 2025, https://www.organdonation.nhs.uk/helping-you-to-decide/your-faith-and-beliefs/zoroastrianism/
26. Good Thoughts, Good Words, Good Deeds -
Wilmette Institute, accessed on July 9, 2025, https://wilmetteinstitute.org/wp-content/uploads/2014/09/Good-Thoughts-Hifa-Nassery.pdf
27. Good Thoughts, Good Words, Good Deeds -
(Early World ... - Fiveable, accessed on July 9, 2025, https://library.fiveable.me/key-terms/early-world-civilizations/good-thoughts-good-words-good-deeds
28. I'm new to Zoroastrianism and would like to
learn more. What does “good thoughts, good words, and good deeds” mean in
practice? - Reddit, accessed on July 9, 2025, https://www.reddit.com/r/Zoroastrianism/comments/14nxp82/im_new_to_zoroastrianism_and_would_like_to_learn/
29. Good Thoughts, Good Words, Good Deeds | by
JMN - Medium, accessed on July 9, 2025, https://jmnzenwriter.medium.com/good-thoughts-good-words-good-deeds-634e53915331
30. Fire Temple - World History Encyclopedia,
accessed on July 9, 2025, https://www.worldhistory.org/Fire_Temple/
31. Parthian Religion - World History
Encyclopedia, accessed on July 9, 2025, https://www.worldhistory.org/Parthian_Religion/
32. Fire temple - Wikipedia, accessed on July
9, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Fire_temple
33. Fire Temples- : r/Zoroastrianism - Reddit,
accessed on July 9, 2025, https://www.reddit.com/r/Zoroastrianism/comments/s2v9l4/fire_temples/
34. Reflections Across Religions: A Historical
Examination of Common ..., accessed on July 9, 2025, https://digitalcommons.winthrop.edu/cgi/viewcontent.cgi?article=1151&context=graduatetheses
35. Zoroastrian festivals - Wikipedia, accessed
on July 9, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Zoroastrian_festivals
36. What are the major Zoroastrian festivals
and their meanings? - NobleChatter, accessed on July 9, 2025, https://www.noblechatter.com/faq/6079/Zoroastrianism
37. Zoroastrianism - Important Zoroastrian or
Parsi Festivals, accessed on July 9, 2025, https://www.hinduwebsite.com/zoroastrianism/festivals.asp
38. Zoroastrian Holy Days and Observances - The
Guibord Center, accessed on July 9, 2025, https://theguibordcenter.org/zoroastrian-holy-days-and-observances/
39. Zoroastrian FESTIVALS - Ramiyar Karanjia,
accessed on July 9, 2025, https://ramiyarkaranjia.com/festivals-of-zoroastrians/
40. The Parthian Empire, accessed on July 9,
2025, https://depts.washington.edu/silkroad/exhibit/parthians/essay.html
41. 8 Key Facts About the Parthian Empire -
TheCollector, accessed on July 9, 2025, https://www.thecollector.com/parthian-empire-facts/
42. www.metmuseum.org, accessed on July 9,
2025, https://www.metmuseum.org/essays/the-sasanian-empire-224-651-a-d#:~:text=One%20of%20the%20most%20energetic,West%20brought%20conflict%20with%20Rome.
43. storymaps.arcgis.com, accessed on July 9,
2025, https://storymaps.arcgis.com/stories/07f90851fcd44212a206d4c6574394fa#:~:text=Zoroastrianism%20became%20the%20state%20religion,I%20captured%20Emperor%20Valerian%20(Fowlkes%2D
44. Parsis - Wikipedia, accessed on July 9,
2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Parsis
45. Parsi | Religion, History, & Facts -
Britannica, accessed on July 9, 2025, https://www.britannica.com/topic/Parsi
46. Zoroastrianism in Iran - Wikipedia,
accessed on July 9, 2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Zoroastrianism_in_Iran
47. Faravahar - World History Encyclopedia,
accessed on July 9, 2025, https://www.worldhistory.org/Faravahar/
48. Faravahar - Wikipedia, accessed on July 9,
2025, https://en.wikipedia.org/wiki/Faravahar
49. Persian Farvahar Collection | Jewelry,
Accessories and Decor, accessed on July 9, 2025, https://www.persiscollection.com/product-category/farvahar-collection/
50. Zoroastrianism, Judaism, and Christianity
share so many features ..., accessed on July 9, 2025, https://olli.gmu.edu/docstore/600docs/1403-651-3-Zoroastrianism,%20Judaism,%20and%20Christianity.pdf
51. An Exploration of Zoroastrian Influence on
Early Judaism - ScholarWorks, accessed on July 9, 2025, https://scholarworks.umt.edu/umcur/2025/oral_session3/12/